দুপুর গড়াতেই মেট্রোরেলে উপচেপড়া ভিড়, বাড়ছে চোরের উৎপাত
৬ মার্চ ২০২৫ ১৯:০২ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৫ ১৯:৪৭
ঢাকা: একদিকে প্রখর রোদ, আরেক দিকে সড়কে যানজট। এই পরিস্থিতিতে মতিঝিল-মিরপুর-উত্তরা রুটের যাত্রীদের প্রধান ভরসা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেট্রোরেল। তাই দুপুর গড়াতেই দেখা যায় প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনগুলোও ছুটছে যাত্রী ঠাসা বগি নিয়ে, যেন তিল ধারনের জায়গা নেই। আর এই ভিড়ের মধ্যেই প্রতিদিন ঘটছে চুরির ঘটনা। নারীরা হচ্ছেন হেনস্থার শিকার। এমন অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেককে পোস্ট লিখতেও দেখা গেছে। এদিকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ট্রেনের প্রতিটি কামরায় দুইজন করে পুলিশ মোতায়েন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাজধানীর মতিঝিল, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেটসহ স্টেশনগুলোতে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। টিকিট কাউন্টারের সামনে অন্যান্য দিনগুলোর চেয়ে ভিড় কিছুটা কম দেখা গেলেও র্যাপিড ও এমআরটি পাস ব্যাবহারীদের লাইন ছিল দীর্ঘ। শুধু প্রবেশ পথেই না প্লাটফর্মেও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বিশেষ করে দুপুর ২ থেকে শুরু হয়ে ৪টা পর্যন্ত স্টেশনগুলো থাকে যাত্রী ঠাঁসা।

যাত্রী ঠাসা বগিতে যেন তিল ধারনের জায়গা নেই
পবিত্র রমজান মাসে সরকারি অফিসের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। যে কারণে অফিস শুরু হতেই বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল স্টেশনে সবচে চাপ দেখা যায় বেশি। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে একটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার ৩-৪ মিনিট পর কেউ যদি প্ল্যাটফর্মে ওঠেন, তবে তিনি আর পরবর্তী ট্রেনে উঠতে পারছেন না। তাকে দ্বিতীয় ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, যাত্রী শরীর ঢুকিয়েছেন তো ব্যাগ দরজার আটকে যাচ্ছে। বার বার মাইকিং করা হচ্ছে দরজা থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাড়ানোর জন্য।
সচিবালয় স্টেশনে ৮ মিনিট পরপর মতিঝিল স্টেশন থেকে যাত্রীবোঝাই করে আসছে মেট্রো। ফলে এ স্টেশন থেকে খুব বেশি যাত্রী ট্রেনে উঠতে পারছেন না। ট্রেন আসলেই হুড়োহুড়ি লেগে যাচ্ছে যাত্রীদের মধ্যে। কার আগে, কে উঠবেন ট্রেনে। আবার লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে যাত্রীরা জড়িয়ে যাচ্ছেন বাকবিতণ্ডায়। এরমধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে কিছু উঠছেন, বাকিরা থেকে যাচ্ছেন পরের ট্রেনের জন্য। কিন্তু সেই ট্রেনও ভর্তি।
যাত্রীদের এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিনিয়ত হচ্ছে চুরি। যাত্রীরা খোয়াচ্ছেন মোবাইল, মানিব্যাগ, কার্ড, নগদ টাকা। মতিঝিল মেট্রোস্টেশন উত্তরা পথের যাত্রী মাহফুজা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোববার প্রথম রোজার দিন বাসায় ফেরার পথে মহিলা কামরা থেকে নামার সময় পেছন থেকে একজন ধাক্কা দিলেন, আমি সামনে ঝুঁকে পড়েছি। তখনো খেয়াল হয়নি পার্স খোয়া গেছে। যখন কার্ড পাঞ্চ করে বের হবো তখন দেখি ব্যাগ থেকে পার্স গায়েব।’

এমন চিত্র দেখা যায় প্রতিটি বগিতে
সোমবার (৫ মার্চ) নাজমুল হাসান নামে একজন ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, ‘তার আইফোন হারিয়েছে মেট্রোরেলে। তিনি লিখেছেন, মতিঝিল থেকে ফার্মগেট যাচ্ছিলাম মেট্রো করে। বেশ ভিড় ছিল। ভিড়ের মধ্যে টের পেলাম কেউ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। এরপর আমার স্টেশন এলো নেমে গেলাম, পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন নেই। আপনারা সাবধানে মেট্রোরেলে চলাচল করবেন।’
মেট্রোরেলে চুরির ঘটনা নতুন না। সচিবালয় স্টেশনে মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে সতর্কতা মাইকিং করা হয় প্রায়ই। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে যাত্রীদের জিনিসপত্র সাবধানে রাখার জন্য বলা হচ্ছে।
চুরির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৬ মার্চ) নিলুফার পারভীন মিতু নামের একজন নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, আজ অফিস ছুটির পর তীব্র ভীড়ে উত্তরা উত্তরগামী মেট্রোরেলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত একমাত্র বগীতে ১০-১২ জন পুরুষ ঢুকে কন্যাশিশুসহ নারীদের শ্লীলতাহানি করেন। প্রতিবাদ করে তাদেরকে নেমে যেতে বলা হয়। কিন্তু তারা নামেন না। এক যুবক দ্রুততার সঙ্গে নেমে যায়, অন্যরা না নেমে উলটো আমাদের গালাগালি করতে থাকে। তিনি তার স্টাটাসে পুলিশ নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করেন। নারী বগিতে পুরুষ উঠে নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার এমন অভিযোগ অনেকেই বলেছেন। পুরুষ যাত্রীদের অন্য কামরাতে যেতে বললে তারা নানা ধরনের কথা শোনান, তর্ক করেন।
এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেট্রোরেলের অভ্যন্তরে বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতি সেট ট্রেনের (৬টি কোচ) ভেতরে দুজন করে এমআরটি পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পুলিশ থাকতেও দেখা গেছে। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ পুলিশ থাকতেও এমন ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে এমআরটি পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) সুজিত কুমার গোমস্তা বলেছেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড ভিড় মেট্রোরেলে। পুলিশ কাজ করছে না অভিযোগ সত্যি না। পুলিশ যাত্রীদের সঙ্গে থাকা বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং মালামাল হারানো গেলে তাৎক্ষণিক খুঁজে বের করা, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ করা, যাত্রীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে রমজান উপলক্ষ্যে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বিশেষ নির্দেশনা ও সময়সূচি দিয়েছে। নির্দেশনায়, পবিত্র রমজানের সময় ইফতারে পানি পান করার জন্য প্রত্যেক যাত্রী মেট্রোট্রেন ও স্টেশন এলাকায় শুধুমাত্র ২৫০ মিলিলিটার পানির বোতল বহন করতে পারবেন। ব্যবহৃত পানির বোতল অবশ্যই প্ল্যাটফর্ম/কনকোর্স/প্রবেশ ও বাহির হওয়ার গেইটে থাকা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। আরও বলা হয়, কোনো অবস্থায় প্ল্যাটফর্ম, কনকোর্স ও মেট্রো ট্রেনের ভেতর অন্য কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। শনিবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন এবং শুক্রবারের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকবে।
সারাবাংলা/জেআর/এইচআই