আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সেমিনারে বক্তারা
‘নারীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র বিনাশে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে’
৬ মার্চ ২০২৫ ২১:৫৪
ঢাকা: দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রীরা বলেছেন, নারী দিবস পালনের কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এখনো নারীর প্রতিনিধিত্ব কম। সমতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নারীরা। অন্যদিকে নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো উদ্বেগজনক। প্রায় ৭০ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে তার ইন্টিমেট পার্টনারের দ্বারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তবে বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা থাকলেও নারীর শক্তি আজ দৃশ্যমান। এ শক্তিকে এগিয়ে নিতে এখনো অনেক পথ হাঁটতে হবে, নারীদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এখনো সমাজে নারীবিদ্বেষ আছে, নারীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকে বিনাশ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে নারীর অধিকারহীনতা দূর করতে শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ‘ইউএন উইমেন’ এর সহযোগিতায় ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’র উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে নারী নেত্রীরা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সেমিনারে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন বেসরকারি সংস্থা ‘নিজেরা করি’ এর সমন্বয়ক খুশি কবির। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলারা বেগম, ইউএন উইমেন বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে খুশি কবির বলেন, বিভিন্ন সময়ে নারী আন্দোলনকর্মী, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারকদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যত বৈশ্বিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বেইজিং সম্মেলন অন্যতম। বেইজিং সম্মেলন কেবল অঙ্গীকার না, এটি নারীর অগ্রযাত্রার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের একটি প্ল্যাটফর্ম। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ত্রিশ বছর পূর্তিতে নারী সমাজের নারীর অগ্রযাত্রার পথে আমরা কতটুকু হাঁটতে পেরেছি, আরও কত পথ হাঁটতে হবে সে বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য আজকের সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলারা বেগম বলেন, এবারের ৮ মার্চ পালনকালে বেইজিং ঘোষণার ৩০ বছর পূর্তি হচ্ছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেইজিং ঘোষণা একটি মাইলফলক দলিল। বেইজিং ঘোষণার আলোকে আমাদের অনেক অর্জন আছে তবে নারীর অগ্রযাত্রার পথে এখনো পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আছে। নারীর বাল্য বিয়ে একটি জাতীয় সমস্যা। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতার হার এখনো কমে নি। প্রায় ৭০ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে তার ইন্টিমেট পার্টনারের দ্বারা সহিংসতার শিকার হন। এমতাবস্থায় নারী দিবস পালন আরও সোচ্চারভাবে করতে হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামাজিক পরিবর্তন করতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সম্মিলিতভাবে নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের কয়েক দশক অতিক্রান্ত হয়েছে। এই দিবস পালনের মূল বিষয় সমতা প্রতিষ্ঠা ও অগ্রযাত্রাকে উদযাপন করা। বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা থাকলেও পাশাপাশি নারীর শক্তি আজ দৃশ্যমান। এই শক্তিকে এগিয়ে নিতে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, নারীর অপ্রচলিত পেশার সাথে যুক্ত হওয়া ও সফলতা অর্জন ও নারীবান্ধব বহুমুখী এজেন্ডা বাস্তবায়নে ইউএন উইমেন গঠন নারী আন্দোলনের একটি অর্জন। আমরা ৮ মার্চ উদযাপন করছি, তবে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের এখনো অনেক পথ হাঁটতে হবে। এখনো সমাজে নারীবিদ্বেষ আছে, নারীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকে বিনাশ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে, পাশাপাশি পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে নারীর অধিকারহীনতাকে দূর করতে শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ইউএন উইমেন বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারী আন্দোলন নারী ও কন্যার ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। বেইজিং ঘোষণা জেন্ডার সমতা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ভিশনারি এজেন্ডা। এই ঘোষণার ৩০ বছর পর এসেও নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এখনো নারীর প্রতিনিধিত্ব কম। এই সময় ন্যায্যতা ও সমতাপূর্ণ পৃথিবী গড়তে বেইজিং ঘোষণার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করতে হবে, নারীর ও কন্যার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে, কিশোরীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে, সম্মানজনক কাজ নারীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে, প্রযুক্তিতে নারীর সমান অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে, পাশাপাশি সুযোগ ও অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
সুইডিশ দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মারিয়া স্ট্রিডসম্যান বলেছেন, বাংলাদেশে নারীরা যৌন হয়রানির স্বীকার হয়। রাস্তাঘাট, স্কুলে এমনকি অফিসেও বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হয় নারীরা। এটা দুঃখজনক। সম্প্রতি বাসে ধর্ষণের ঘটনা আমাকেও অবাক করেছে। এগুলোর একটি সমাধান প্রয়োজন এবং ভূক্তভোগী নারীরা যাতে জাস্টিস পায়, সেটাও আমাদের দেখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে, আমি আমার এম্বাসি থেকে উদ্যেগ গ্রহণ করবো সহযোগিতার জন্য। কিন্তু পাশাপাশি সবারই এগিয়ে আসতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকার ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিষয়ে দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্যানেল আলোচনা শেষে মিডিয়া বাজারের উদ্যোগে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র চক্রবুহ্য, লায়লা, ক্রাতি এবং কারমা প্রদর্শন করা হয়। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন শেষে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আদিবাসী নারী সংগঠন স্পার্ক- এর ডালিয়া চাকমা।
সারাবাংলা/এফএন
সারাবাংলা/এফএন/আরএস