উদীচীর যশোর হত্যাকাণ্ড
২৬ বছরেও শনাক্ত হয়নি হত্যাকারী, বিচারের নামে প্রহসন: উদীচী নেতারা
৬ মার্চ ২০২৫ ২২:৫০ | আপডেট: ৭ মার্চ ২০২৫ ০০:১৮
ঢাকা: উদীচীর যশোর হত্যাকাণ্ডের ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও প্রকৃত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে পারে নি কোন সরকার, বিচারের নামে যা হয়েছে তা প্রহসন বলে মন্তব্য করেছেন উদীচী নেতারা।
তারা বলেন, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে যশোর হত্যাকাণ্ডই এ ধরনের প্রথম হত্যাকাণ্ড। যদি দ্রুততার ভিত্তিতে সঠিক তদন্ত করে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব হতো, তাহলে পরবর্তীতে বাংলাদেশে পল্টন ময়দানে বোমা হামলা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, নেত্রকোনা বোমা হামলা, সিরিজ বোমা হামলা এগুলো হতো না।
উল্লেখ্য, ৬ মার্চ যশোর হত্যাকাণ্ড দিবস। ১৯৯৯ সালের এই দিনে, যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। হাজার হাজার মানুষ আনন্দঘন পরিবেশে যখন উপভোগ করছিল বাউল শিল্পীদের পরিবেশিত গান, তখন হঠাৎ রাত ১২টা ৫০ মিনিটে ঘাতকের বোমা হামলায় প্রকাণ্ড বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিরসেদিনের সেই বোমা হামলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ১০টি তাজা প্রাণ, আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় অসংখ্য মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকেই আজও মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
দেশব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের আয়োজনে বৃহস্পতিবার উদীচী চত্বর, তোপখানা রোডে (প্রেসক্লাবের বিপরীতে) অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। এই সমাবেশে উদীচীর শিল্পী কর্মীগণ যশোর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে একটি নাট্যালেখ্য পরিবেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। শিল্পীরা তাদের গান, অভিনয়, সংলাপের মাধ্যমে যশোর হত্যাকাণ্ডের শহীদদের প্রতি যেমন গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তেমনি তাদের পরিবেশনায় হত্যাকাণ্ডের বিচারহীনতার বিরুদ্ধেতীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ উচ্চারিত হয়।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাঝে মাঝে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা, তদন্তহীন বিচারের নামে প্রহসন, আহত-নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে একে একে কথা বলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি একরামুল কবীর ইল্টু, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন ও সহ সভাপতি হাবিবুল আলম।
একরামুল কবীর ইল্টু ছিলেন সেদিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক। তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ঘটনার ভয়াবহতায় সেদিন মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল যে, যশোর অঞ্চলের ফুল বিক্রেতারা বলেছিলেন, ‘এই শহরে ফুল বিক্রি করতে আমাদের ঘৃণা হয়।’
জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলে ঘটা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে গাফিলতির কারণে ঘটনার মূল অপরাধীরা পাড় পেয়ে গেছে। যা নিম্ন আদালতের বিচারক মামলার রায় প্রদানের সময় অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেছিলেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে হাবিবুল আলম ঘটনার পুনঃতদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবী জানান। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের পরে অনেক সরকার এসেছে-গেছে কিন্তু কোন সরকারই যশোর হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার তো করতে পারেই নি, তারা নিহত ও আহতদের জন্যযথাযথ ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে পারে নি।
তিনি প্রশ্ন তুলেন, উদীচীর ওপর কেন এই হামলা? উদীচী অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলে, এটাই কি তাদের অন্যায়? তিনি বলেন, বারবার হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতনের পরও উদীচীর লড়াই থেমে নেই। দেশের শোষিত মানুষের মুক্তির লক্ষে উদীচীর লড়াই আরও জোরদার হয়েছে। সবশেষ ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে উদীচীর শিল্পীকর্মীরা সামনের কাতারে থেকে গণমানুষের পক্ষে লড়াই করেছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান জনআকাক্সক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ দেখিয়েছে। নতুন বাংলাদেশে আমরা যশোর হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার দেখতে চাই।
গোটা আলেখ্য অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা, পরিকল্পনা ও নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলেন, রহমান মুফিজ, বিজন রায়, সুরাইয়া পারভীন, আরিফ নূর, রবিউল ইসলাম শশী ও মীর সাখাওয়াত। আর এতে অংশ নেন উদীচীর নাটক, আবৃত্তি, সংগঠন, সঙ্গীত ও অন্যান্য বিভাগের শিল্পীরা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস