দ. সুদানে ইউএনের হেলিকপ্টারে হামলা, জেনারেলসহ নিহত ২৭ সেনা
৮ মার্চ ২০২৫ ১৩:৪০ | আপডেট: ৮ মার্চ ২০২৫ ১৫:৫৮
দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের একটি হেলিকপ্টারে হামলার ঘটনায় দেশটির এক শীর্ষ জেনারেলসহ বেশ ২৭ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৭ মার্চ) জাতিসংঘ এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে এবং ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
সরকারি সূত্রের তথ্যমতে, জাতিসংঘের হেলিকপ্টারটি উত্তরাঞ্চলীয় নাসির শহর থেকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই এটি হামলার শিকার হয়।
দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারের মধ্যে ২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি ইতোমধ্যে চাপের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আপার নাইল রাজ্যে দুই পক্ষের অনুগত বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
জাতিসংঘ মিশন (ইউএনএমআইএসএস) জানিয়েছে, জাতিসংঘের হেলিকপ্টারটি সরকারি বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার করতে নাসিরে গিয়েছিল। কিন্তু তখনই তারা হামলার শিকার হয়। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের এক ক্রু সদস্যও রয়েছেন।
দক্ষিণ সুদানের প্রেসিডেন্ট সালভা কির জানিয়েছেন, নিহত জেনারেল মাজুর ডাক এবং অন্যান্য সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাশার জাতিসংঘকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট সালভা কির দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, আমাদের দেশ আবার যুদ্ধের পথে যাবে না। কেউ যেন নিজ হাতে আইন তুলে না নেয়। সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে।’
সরকারি তথ্যমন্ত্রী মাইকেল মাকুয়েই জানান, এই হামলায় প্রায় ২৭ জন সেনা নিহত হয়েছেন। তবে হেলিকপ্টারটি আকাশে থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হয়েছে নাকি ভূমিতে থাকা অবস্থায়, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
দক্ষিণ সুদানের সরকার বলছে, বিদ্রোহী মিলিশিয়া ‘হোয়াইট আর্মি’ এই হামলার জন্য দায়ী। সরকার দাবি করেছে, এই মিলিশিয়াটি ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। তবে মাশারের দল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এদিকে, জাতিসংঘের দক্ষিণ সুদান মিশনের প্রধান নিকোলাস হেইসোম বলেছেন, ‘এই হামলা সম্পূর্ণ ঘৃণ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনে এটি যুদ্ধাপরাধ হতে পারে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক উত্তেজনা নতুন করে পূর্ণমাত্রার গৃহযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠীর (আইসিজি) আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক অ্যালান বসওয়েল বলেন, ‘দক্ষিণ সুদান দ্রুত নতুন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। যদি অবিলম্বে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বড় ধরনের জাতিগত সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।’
জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। দেশটির নেতারা যেন সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত করেন এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকান।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্বাধীনতার পরপরই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন (ইউএনএমআইএসএস) দক্ষিণ সুদানে মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে ৭৩টি দেশের প্রায় ২০ হাজার শান্তিরক্ষী দেশটিতে কাজ করছে।
সারাবাংলা/এনজে