মেট্রোরেলে নারীদের হেনস্থা এড়াতে নতুন উদ্যোগ
১০ মার্চ ২০২৫ ১৪:৩১ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ১৬:২৮
ঢাকা: গত কয়েকদিনে মেট্রোরেলে নারী হেনস্থার ঘটনা ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। মহিলা কোচের সামনে বেরিকেড দিয়ে সেখানে পুরষদের ভেতরে যাওয়া নিষেধ লিখে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মহিলা কোচে যেন পুরুষ যাত্রী না ওঠেন তা দেখার জন্য একজন নিরাপত্তকর্মীও রাখা হয়েছে। সোমবার (১০ মার্চ) কয়েকটি স্টেশনে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
পবিত্র রমজান মাসে সরকারি অফিসের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করায় দুপুরের পর থেকেই ভিড় শুরু হয় মেট্রোতে। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ হয় যে, একটি ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার তিন মিনিট পর কেউ যদি প্ল্যাটফর্মে ওঠেন, তবে তিনি আর পরবর্তী ট্রেনে উঠতে পারছেন না। তাকে দ্বিতীয় ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, যাত্রীর আটকে যাচ্ছে দরজার বাইরে। বার বার মাইকিং করা হচ্ছে দরজা থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর জন্য।
দুপুর দুইটার পর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল মেট্রো স্টেশন, প্লাটফর্ম কোথাও পা রাখার জায়গা থাকেনা। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। একক টিকিট সংগ্রহ করার লাইনের চেয়ে র্যাপিড ও এমআরটি পাসধারী যাত্রীদের লাইন কখনও কখনও প্ল্যাটফর্ম থেকে সিঁড়িতে নেমে আসে। যাত্রীদের ভিড় আর ধাক্কা ধাক্কিতে ট্রেন থেকে যাত্রিদের নামার পরিবেশ থাকছেনা। নারী, শিশু, প্রবীন নাগরিকদের জন্য এ সময় এই পরিস্থিতিতে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ভিড়ের মধ্যেই নারী কামরায় উঠে পড়েন পুরুষ যাত্রীরা। যা নারীদের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।

মেট্রোরেলে মহিলা কোচের সামনে অপেক্ষা করছেন নারী যাত্রীরা। ছবি: সারাবাংলা
একাধিক নারী সারাবাংলার কাছে তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আফরোজা দীনা যিনি মতিঝিল অগ্রনী ব্যাংকে কাজ করেন সারাবাংলাকে বলেন, গেল সপ্তাহে দুইটা ছেলে উঠে পড়ে মহিলা কোচে। যেখানে একদম যাত্রী ঠাসা পরিস্থিতি। ছেলে দুইজন ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বলা হয়েছে এটা শুধুমাত্র মহিলাদের কোচ। এরমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, শুরুতে কিছু বলেনি। কিন্তু সচিবালয়ে থামার পর নেমে যেতে বললে তারা মেয়েদের বাজে বাজে মন্তব্য করা শুরু করে। যদিও টিএসসি স্টেশনে নেমে যায়।
এর আগে গেল সোমবারের (৩ মার্চ) এক ঘটনা ফেইসবুকে শেয়ার করেছিলেন আরেক যাত্রী। নিলুফার পারভীন মিতু নামের একজন নিজের প্রোফাইলে লিখেছেন, আজ অফিস ছুটির পর তীব্র ভীড়ে উত্তরা উত্তরগামী মেট্রোরেলে নারীদের জন্য সংরক্ষিত একমাত্র কোচে ১০-১২ জন পুরুষ ঢুকে কন্যাশিশু সহ নারীদের শ্লীলতাহানি করে। প্রতিবাদ করে তাদেরকে নেমে যেতে বলা হলেও তারা নামেন না। নারী শিশুকে হেনস্তা করা সে যুবক দ্রুততার সাথে মেট্রো থেকে নেমে যায়। অন্যরা না নেমে উলটো আমাদের গালাগালি করতে থাকে।
মহিলা কোচে পুরুষ উঠে নারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার এমন অভিযোগ অনেকেই বলেছেন। পুরুষ যাত্রীদের অন্য কামরাতে যেতে বললে তারা নানা ধরনের কথা শোনায়। তর্ক করে। এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সচিবালয় স্টেশন থেকে ওঠা মিরপুরের যাত্রী কাজী লুনা। তিনি সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, অনেক পুরুষ বৌ-বাচ্চা নিয়ে নারীদের কোচে উঠে পড়েন। বার বার বুঝিয়ে বলা হলেও বৌয়ের পাশে বসে থাকেন, নামেন না। নারীদের স্বস্তির জন্য এই কামরা। সেখানে একজন বা দুইজন পুরুষ বা তার বেশি গাদাগাদির মধ্যে উঠলে ভীষন অস্বস্তি লাগে।
সোমবার (১০ মার্চ) সরেজমিনেও দেখা গেছে, মতিঝিলে মেট্রো থামার সঙ্গে সঙ্গে সবাই নেমে গেলেও নারী কামরায় কয়েকজন ছেলে বসে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা বললেন, তারা উত্তরা যাবেন সিট পাননা বলে আগের স্টেশন থেকে উঠে বসেছেন। তখনি পুলিশ এসে তাদেরকে নারী কোচ থেকে বের করে দিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন এটা মেয়েদের জন্য। কিন্তু তাদের একজন নারী লেখা খুঁজে না পেয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন। পরে পুলিশ ধমক দিয়ে অন্য কামরায় পাঠিয়েছেন।
এ সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সচিবালয়ে স্টেশনে দেখা গেলো নারীদের কোচের সামনে নোটিশ দিয়েছে ডিএমটিসিএল। সেখানে লেখা ‘ওয়াশরুম ব্যতীত পুরুষ যাত্রীদের প্রবেশ নিষেধ’। পাশে আরেকটা নোটিশে লেখা ‘১ম কোচ শুধুমাত্র মহিলা যাত্রীদের জন্য’। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় লেখার পাশাপাশি একজন নিরাপত্তাকর্মীও দেখা গেছে সেখানে। সেই সঙ্গে কোচের ভেতরে থাকেন দুইজন করে নারী পুলিশ।
এ দিকে যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেট্রোরেলের অভ্যন্তরে বাড়তি নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতি সেট ট্রেনের (৬টি কোচ) ভেতরে দুজন করে এমআরটি পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পুলিশ থাকতেও দেখা গেছে। এসব পুলিশ যাত্রীদের সঙ্গে থাকা বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং মালামাল হারানো গেলে তাৎক্ষণিক খুঁজে বের করা, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ করা, যাত্রীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে রয়েছেন।
সারাবাংলা/জেআর/এনজে