আবু সাইদ হত্যা মামলা: সকল আসামির সম্পদের তথ্য তলব
১০ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৭
রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি সাত পুলিশ কর্মকর্তা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ পাঁচ শিক্ষক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছয় নেতা, রংপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চিকিৎসকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
সম্প্রতি আইসিটির সহসমন্বয়ক মুহম্মদ শহীদুল্যাহ্ চৌধুরীর সই করা চিঠিতে বলা হয়, তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের সম্পদের বিবরণ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে গত ৫ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
চিঠিতে বলা হয়েছে— রংপুরের ডিআইজি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ২০ জনের তারা সবাই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) যেসব আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ চেয়েছেন, তারা হলেন— রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন ও সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, কোতোয়ালি জোনের সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আল ইমরান হোসেন ও তাজহাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম।
শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন– বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও তৎকালীন প্রক্টর শরীফুল ইসলাম (আবু সাঈদ মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে), প্রক্টর দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা মো. মশিউর রহমান, আওয়ামী পন্থী শিক্ষক সংগঠন নীল দলের নেতা ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল।
ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন– বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার দাস ওরফে টগর, তথ্য সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এমরান চৌধুরী আকাশ (আবু সাঈদ মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান মাসুদ।
এ ছাড়া রয়েছেন রংপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ সাদাত ও রংপুর কোতোয়ালি থানার চিকিৎসক মো. সারোয়াত হোসেন ওরফে চন্দন। এই দুজনের বিরুদ্ধে আবু সাঈদ হত্যাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ (২৫)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। আবু সাঈদকে গুলি করার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আন্দোলন বেগবান হয়। পররবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৮ আগস্ট রংপুরের আদালতে হত্যা মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ সাতজনের নাম মামলায় নথিভুক্ত করার জন্য সম্পূরক এজাহার দায়ের করেন তিনি। আদালতের আদেশে তাদেরও ওই মামলায় নামীয় এজহারভুক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া আবু সাঈদকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা করে। পরবর্তীতে মামলা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই মামলার তদন্ত চলছে।
সারাবাংলা/আরএস