‘ভাসমান গুদাম’ লাইটারেজ জাহাজের বিরুদ্ধে অভিযানে কোস্টগার্ড
১০ মার্চ ২০২৫ ২০:২৭ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৫ ২২:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আমদানি করা পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সীমানায় সাগর ও নদীতে ভাসমান লাইটারেজ জাহাজের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে কোস্টগার্ড। রমজানে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কোস্টগার্ডের অভিযানে জাহাজগুলোকে তাদের নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা জারি করেছে, আমদানি করা পণ্য বোঝাইয়ের পর লাইটার জাহাজকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দর সীমানা ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু বন্দরের এ নির্দেশনার পরও কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে সাগরে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ভাসছে শত, শত লাইটারেজ জাহাজ। আছে বেশকিছু অয়েল ট্যাঙ্কারও। ‘অদৃশ্য কারণে’ নির্ধারিত গন্তব্যে গিয়ে পণ্য খালাস না করে সেগুলো নদী-সাগরেই অবস্থান নিয়ে আছে।
সূত্রমতে, কর্ণফুলী নদীতে ২২টি এবং পতেঙ্গা থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পর্যন্ত বহির্নোঙ্গরে ৮৭টি কার্গো, কনটেইনার ও বাল্ক জাহাজ ভাসছে। এছাড়া ৩৩টি অয়েল ট্যাঙ্কার অপরিশোধিত তেল নিয়ে সাগরে ভাসছে।
এ অবস্থায় নৌ পরিবহন অধিদফতর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সোমবার (১০ মার্চ) থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পূর্বাঞ্চলীয় কোস্টগার্ড।
চট্টগ্রাম বন্দরের নৌ-বিভাগের উপ-সংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. ফরিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমার নির্দেশনার পরও যেসব জাহাজ পণ্য খালাসের জন্য নির্ধারিত গন্তব্যে যাচ্ছে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে কোস্টগার্ডকে অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা অভিযান শুরু করেছে। আমরা যদি জাহাজগুলোকে গন্তব্যে পাঠাতে পারি, তাহলে রমজানে বাজারে পণ্যের সংকট হবে না।’
বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে সমুদ্রপথে দেশি-বিদেশি মাদার ভ্যাসেল প্রথমে আসে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে। এর মধ্যে গভীরতা বেশি হওয়ায় যেসব মাদার ভ্যাসেল সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে না, সেগুলোর পণ্য বহির্নোঙ্গরেই লাইটারেজ জাহাজের (ছোট আকারের জাহাজ) মাধ্যমে খালাস করা হয়। এরপর সেসব পণ্য লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে ও বন্দরের জেটিতে এনে খালাস করা হয়। আবার লাইটারের জাহাজের মাধ্যমে নৌপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যেও পণ্য পরিবহণ করা হয়।
সূত্রমতে, চট্টগ্রামে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস ও পরিবহণ করা হয়। এর সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি)। তারাই প্রতিদিন বার্থিং সভা করে মাদার ভ্যাসেলের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়।
কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে শত, শত লাইটারেজ জাহাজ পণ্য নিয়ে নির্ধারিত গন্তব্যে না গিয়ে নদী ও সাগরে ভাসছে। এর অধিকাংশই ভোগ্যপণ্য বোঝাই, যেগুলো রমজানকে সামনে রেখে আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু পণ্য খালাস হয়েছে। অভিযোগ আছে, আরও পণ্য বাজারে গেলে দাম নিম্নমুখী হয়ে যাবে, এ আশঙ্কা থেকে আমদানিকারকরা সেসব পণ্য খালাস না করে লাইারেজ জাহাজে রেখে দিয়েছেন।
এ সংকট কাটাতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলমের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাহাজ মালিকদের সংগঠন, শিপিং এজেন্ট, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, লাইটারেজ জাহাজগুলো পণ্য খালাস না করে ‘ভাসমান গুদাম’ হিসেবে ব্যবহৃত হলে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড এবং নৌ পুলিশের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌ পরিবহন অধিদফতরের সিদ্ধান্তের আলোকে মার্চের শুরু থেকে তারা নদী ও সাগরে টহল দিয়ে ভাসমান লাইটারেজ জাহাজগুলোকে সতর্ক করা শুরু করে। এসময়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৫টি জাহাজকে বন্দর সীমানা পার করে দেয়া হয়। এরপরও শত, শত লাইটারেজ জাহাজ ভাসতে থাকায় অভিযান জোরদার করা হয়েছে, যাতে বন্দরের নির্দেশনার বিষয়টিও আছে। অভিযানে কোস্টগার্ডের সঙ্গে নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ এবং বন্দরের প্রতিনিধিও ছিলেন।
অভিযান পরিচালনাকারী কোস্টগার্ডের জাহাজ সবুজ বাংলার অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কমান্ডার সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিশেষত ভোগ্যপণ্য ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল নিয়ে আসা লাইটার জাহাজ যেন ৭২ ঘণ্টার বেশি বন্দরে না থাকতে পারে, এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি।’
সারাবাংলা/আরডি/এসআর