নানকের সহযোগীকে ছিনিয়ে নিল দুর্বৃত্তরা, ওসির ভূমিকা নিয়ে ‘প্রশ্ন’
১২ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫৪ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ১৯:১৯
ঢাকা: জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় হওয়া পাঁচ মামলার আসামিকে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (১২ মার্চ) মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকার বি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে হত্যা মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামির নাম- গোলাম মোস্তফা। তিনি জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো হলো- মোহাম্মদপুর থানার মামলা নম্বর-৬৯, রামপুরা থানার মামলা নম্বর-১৮, বাড্ডা থানার মামলা নম্বর-১৬, ক্যান্টমেন্ট থানার মামলা নম্বর-১৬ ও চকবাজার থানার মামলা নম্বর-৫৬।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের অন্যতম সহযোগী গোলাম মোস্তফা ও হাফিজুর রহমান লিকুর অন্যতম ক্যাশিয়ার এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি আনিসুর রহমান সোহাগ রাত ১০ টায় মোহাম্মদপুর থানায় প্রবেশ করে ওসি’র সঙ্গে মিটিং করে। ওসির সঙ্গে মিটিংয়ের পর থেকে মামলার আসামি হয়েও এলাকায় নিয়মিত ঘুরে বেড়ায়। আজ এদের একজনকে গ্রেফতার করেও ওসির নির্দেশে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অধস্তন অফিসাররা।
অপর এক সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টায় লালমাটিয়া এলাকার বি-ব্লকের ৭ নম্বর রোডে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতার করতে যায়। তাকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরানোর পর আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ধস্তাধস্তিতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। তখন পুলিশের সদস্যরা মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে ফোন করে। এ সময় ওসি আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আসামিকে কেন ধরতে গেছে?- এমন ধমক দিয়ে অফিসারদের তিনি শাসন করেন।
প্রতক্ষ্যদর্শী শরীফুল জানান, বেলা ১১ টায় বেশ কয়েকজন অফিসারসহ পুলিশের একটি টিম রাস্তা থেকে একজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় আশপাশে থাকা ৮-১০ জন সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন এসে পুলিশের ওপর আতর্কিত হামলা করে। মনে হচ্ছিল, সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে পুলিশকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি করে তারা। হামলার পরও তারা ওই লোককে হাতকড়া পরায়। এর পর পুলিশ ফোনে যেন কার সঙ্গে কথা বলার পর হাতকড়া খুলে দেয়। পরে পুলিশের কাছ থেকে জানা যায়, ওই লোকের নামে একাধিক হত্যা মামলা আছে।
পুলিশের ওপর হামলায় অংশ নেওয়া সিকিউরিটি গার্ড দেলোয়ার বলেন, ‘বেলা ১১ টার দিকে এভোরেজ স্কুলের মালিক আমাদের স্যার গোলাম মোস্তফা স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে উঠছিল। এ সময় পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করতে চায়। ওই সময় তার এক হাতে হাতকরাও লাগায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা যারা ছিলাম সবাই পুলিশকে ঘেরাও করে ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে যাই। তখন পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকজনের ধাক্কাধাক্কি হয়। তখন মোবাইলে আমাদের কর্তৃপক্ষ থানার ওসিকে বিষয়টি জানালে পুলিশ তার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যায়।’
কথা বলার এক পর্যায়ে দেলোয়ারের সঙ্গে যোগ দেয় আরও দুই সিকিউরিটি গার্ড হাফিজ ও রেজা। তারা বলেন, ‘পুলিশের এত বড় সাহস কোনো কিছু ছাড়া আমাদের সামনে থেকে স্যারকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। গ্রেফতার করতে আসছে দেখে আমরা সবাই পুলিশকে উল্টা আটক করেছি। তাদের ওই সময় ওয়ারেন্ট দেখাতে বলেছি। তারা মোবাইলে কাগজ দেখায়। কোনো কাগজপত্র সাথে নিয়ে আসে নাই।’
এ ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা জানান, ‘সকালে মোহাম্মদপুর থানার একটি টিম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫ মামলার আসামিকে গ্রেফতার করতে লালমাটিয়া এলাকায় যায়। আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়টি আমি অবগত। কিন্তু আসামিকে গ্রেফতারের সময় তার লোকজন মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ আসামিকে ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। খুব শিগগিরিই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম