Wednesday 12 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রলম্বিত করার পাঁয়তারা করছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৫ ১৯:১৭ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫ ২১:১৪

সম্মেলনে আহমেদ আজম খান

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রলম্বিত করার পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। তবে দলগুলোর নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে নগরীর কাজির দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে আহমেদ আজম খান একথা বলেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মতবিনিময় সভার পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা আহমেদ আজম খান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার জন্য নানা ধরনের পাঁয়তারা করছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা মনে করি, কারও ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে আমরা জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। এ মুহুর্তে নির্বাচন প্রলম্বিত করা মানেই জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, দুয়েকটি রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে ইফতার করছে। তারা একবার বলছে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ক্ষমা করে দেবে, আরেকসময় বলছে তাদের বিচার করবে। একেকদিন একেক কথা বলে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে, জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলবো, এমন কোনো দায়িত্বহীন বক্তব্য দেবেন না যাতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। এমন কোনো দায়িত্বহীন বক্তব্য দেবেন না যাতে আগামীদিনে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বিনষ্ট হয়। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ বছরের মধ্যে যাতে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, সেজন্য জোর দাবি জানাই।

বিজ্ঞাপন

সভায় আলোচিত বিষয়বস্তু তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ নেতা বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পর আমরা যে মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই মুক্ত বাংলাদেশে এখনকার মানুষের দাবি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে জনগণের ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। সেই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণা এবং রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে দলকে সুসংগঠিত করতে আমরা সারাদেশ সফর করছি। এ সভা মনে করছে, এ বছরের মধ্যে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন।’

‘গত সাত মাসে আমরা লক্ষ্য করছি, সংস্কার অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলছে। সংস্কারের কিছু প্রস্তাবনা জমা হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন নিয়ে এখনও পর্যন্ত একটি সভাও হয়নি এবং কী প্রক্রিয়ায় সেটি বাস্তবায়ন হবে সেটা নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো ডায়লগও শুরু হয়নি। তাই আমরা মনে করি, সংস্কারের নামে আর নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যতই প্রলম্বিত হবে, ততই দেশের যে বিশৃঙ্খল অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার বিশৃঙ্খল অবস্থা, সার্বিক অর্থনীতির যে বিশৃঙ্খল অবস্থা, কোনো জায়গায় আমরা সেই অবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে পারছি না একটি নির্বাচিত সংসদ এবং একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া। উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোও বলছে- আমরা একটি নির্বাচিত সরকারের সময়ই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবো। এ মুহুর্তে বিদেশি বিনিয়োগ কিন্তু একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগসহ বাংলাদেশকে একটি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী দেশ হিসেবে দাঁড় করাতে হলে এখন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন যেটা আমরা অনেক আগ থেকেই বলে আসছি।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে আহমেদ আজম খান বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যাকে আমরা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনে সহযোগিতা করেছি, তার উদ্দেশে বলবো, ড. ইউনুসের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়া। এ্ই সুযোগ আশা করি ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপলব্ধি করবেন এবং এই সুযোগ তিনি হারাবেন না।’

‘কারণ, নির্বাচন প্রলম্বিত হলে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, নারীর ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, শিশুদের ওপর যেভাবে জঘন্য অপরাধ হচ্ছে, তাতে এ সরকার দিন দিন একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে জনগণ মনে করছে, এ মুহুর্তে এ সরকারের নির্বাচন দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিৎ এবং নির্বাচিত সরকারই দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে।’

সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের পরিস্কার মেসেজ, দেশনায়ক তারেক রহমান স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, দলের ভেতরে যারা হানাহানিতে ব্যস্ত থাকবেন, কোনো ধরনের টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকবেন, অন্য কোনো অনৈতিক ব্যবসায় ব্যস্ত থাকবেন, পরিস্কার বার্তা হচ্ছে- তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে তাদের দুষ্কর্মের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছেন। স্পষ্ট কথা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাটি ব্যবসা, বালি ব্যবসা- কোনো ধরনের অনৈতিক কাজে বিএনপি জড়াবে না। বিএনপি আগামীদিনে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে। সেজন্য প্রস্তুতি নিতে দেশনায়ক তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ‍মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির সভায় বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/আরডি/এসআর

অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান চট্টগ্রাম নির্বাচন প্রলম্বিত করার পাঁয়তারা পায়তারা বিএনপি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলন সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর