যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ভারতের ওষুধ শিল্পে ‘বড় ধাক্কা’
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৩:৫৬ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪১
ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্কারোপ আগামী মাস থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে, যা দেশটির ওষুধ রফতানির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যয় বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তার মূল লক্ষ্য ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি করা, যাতে ভারতীয় ওষুধ শিল্প অতিরিক্ত শুল্কের চাপ এড়াতে পারে।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, ২ এপ্রিল থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করা হবে। এটি মূলত ভারত কর্তৃক আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত মোট ব্র্যান্ডবিহীন ওষুধের প্রায় অর্ধেকই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। কম খরচের জেনেরিক ওষুধের কারণে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় অনেকাংশে কমে যায়। ২০২২ সালে, ভারতীয় ওষুধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যয়ে প্রায় ২১৯ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে বলে আইকিউভিআইএ-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু নতুন শুল্কের কারণে ভারতীয় ওষুধের দাম বাড়তে পারে, যা বাজারে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইয়েল ইউনিভার্সিটির ওষুধমূল্য বিশেষজ্ঞ ড. মেলিসা বারবার বলেন, ‘শুল্কের কারণে ওষুধের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, এবং বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে।’
আইকিউভিআইএ-এর প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ৬০ শতাংশ ওষুধ ভারত থেকে আসে। দেশটির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট সারট্রালিন-ও ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংস্থা পাবলিক সিটিজেনস-এর আইনজীবী পিটার মেবারডুক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এক চতুর্থাংশ রোগী ইতোমধ্যে উচ্চমূল্যের কারণে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে পারছেন না। নতুন শুল্ক তাদের পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কোম্পানিগুলোকে দেশেই কারখানা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম দামের ওষুধের জন্য এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না।
ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের সুদর্শন জৈন বলেন, ‘ভারতে ওষুধ উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ সস্তা। ফলে দ্রুত উৎপাদন স্থানান্তর করা অসম্ভব। একটি নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে এবং সেটি চালু করতেও ৫ থেকে ১০ বছর লেগে যাবে।’
ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ১২.৭ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ রফতানি করে, যা বর্তমানে শুল্কমুক্ত। অন্যদিকে, মার্কিন ওষুধ ভারতে প্রবেশের সময় ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
এই পার্থক্যের কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় ওষুধের ওপর পালটা শুল্কারোপ করতে যাচ্ছে , যা উভয় দেশের ওষুধ বাজারকে চাপে ফেলতে পারে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার সম্প্রতি ৩৬টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধকে শুল্কমুক্ত ঘোষণা করেছে। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে, যদিও দিল্লির পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকট মনে করেন, ‘শুল্ক বৃদ্ধির কারণে সাময়িক সংকট তৈরি হলেও, দুই দেশই ওষুধ সরবরাহ চেইন নষ্ট হতে দেবে না। বছরের শেষ নাগাদ দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে।’
তবে আগামী চার বছর ভারতের ওষুধ শিল্পের জন্য কঠিন হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
সারাবাংলা/এনজে