রমনায় রবী ঠাকুরের মধুমঞ্জরি, ফুল ফুটবে শিগগিরই
১৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৯ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৫ ১৬:১৭
ঢাকা: রমনায় মধুমঞ্জরি গাছ। আর ক’দিন পরেই ফুটবে ফুল। ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-লাল ফুল সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সন্ধ্যায় নতুন করে ফুটবে ফুল, থোকায় থোকায়, ছড়াবে হালকা সুবাস। মধুমঞ্জরির ফুল ও লতা বনাজি ঔষধি গাছ বলেও পরিচিত।
মধুমঞ্জরি দেশীয় ফুল। তবে বর্তমানে তা প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ ছাড়া ফুলটি তার পরিচয় সংকটে ভুগছে। রঙিন মধুমঞ্জরি ফুলকে অনেকে মাধবীলতা বলেও জানেন। এটি মূলত সাদা রঙের। শৌখিন বাগানি এবং সংরক্ষণাগার ছাড়া তেমন দেখা মেলে না মধুমঞ্জরির। তবে ঢাকার কার্জন হল প্রাঙ্গণ, রমনা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছটি আছে।
জানা গেছে, কুমিল্লায় ইতোমধ্যে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ভিক্টোরিয়া ডিগ্রি কলেজ শাখার ক্যাম্পাসে এই ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। কুমিল্লা গার্ডেনার্স সোসাইটির পরিচালক ডা. আবু নাঈম কুমিল্লায় গাছটি চেনানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি চান মানুষ যেন প্রকৃত মধুমঞ্জরি চেনেন ও সংরক্ষণ করেন।
তিনি বলেন, মধুমঞ্জরি ফুলের পাঁচটি পাপড়ি, তারমধ্যে পঞ্চম পাপড়িটির গোড়ার দিক হলদেটে। ফুল দেখতে তিল ফুলের মতো এবং সুগন্ধি। বসন্ত ও গ্রীষ্ম এ ফুলের ঋতু হলেও কখনও কখনও বর্ষা পর্যন্ত ফোটে। ফুল থেকে ফল হয় যা সামারা নামে পরিচিত, ফলে দুই-তিনটি বীজ থাকে এবং তা রোমশ। বীজের মাধ্যমে এবং কাটিং এর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয়। খুব কম লোকেই এই মধুমঞ্জরি গাছ চেনেন। মধুমঞ্জরি এক সময় ময়মনসিংহে প্রচুর পাওয়া যেত।
মধুমঞ্জরি বৃক্ষারোহী লতা এবং দীর্ঘজীবী। ডাল ছোট ছোট এবং ঝোপঝাড় হয়ে যায়। এভাবে বহুবর্ষী হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায়। ডাল দু-তিন বছর পরপর কেটে দিতে হয়, তারপর লতা যতই বাড়তে থাকে ততই নতুন নতুন ডালপালা গজায়, ফুল বেশি ফোটে। এর মোটা মোটা ডালের ছাল মেটে রঙের, ভেতরের কাঠ লালচে ও শক্ত। বাগানের শোভার জন্য যত্ন করে মধুমঞ্জরি লাগানো হয়।
বর্তমানে মধুমঞ্জরি প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রঙিন মধুমঞ্জরি ফুলকে অনেকে মাধবীলতা বলে জানেন। এটি মূলত সাদা রঙের। খুব অল্প দিনের মধ্যেই সমস্ত ফুল ফুটে যায়। এতে ফুল দেখার সুযোগ কমে যায়। এই গাছ এবং ফুল নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। আসলে এর কোনো বাংলা নাম ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের লেখায় “স্মরণচিহ্ন কত যাবে উন্মুলে মোর দেয়া নাম লেখা থাক ওর ফুলে মধুমঞ্জরিলতা” এই নাম দিয়ে কবি গাছটিকে আপন করে নিলেন। এখন গাছ এবং ফুলের খুবই কদর।
গাছ বিশেজ্ঞারা জাানিয়েছে, মধুমঞ্জরি আদি নিবাস মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড- এই সব ক্রান্তীয় অঞ্চলে এ গাছ ভালো জন্মে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি মালয় দেশের গাছ এবং সেখান থেকে ভারত বা বাংলাদেশে এনে লাগানো হয়েছে। তবে মধুমঞ্জরি আমাদের দেশে বাগানসজ্জায় এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে তাকে আর ভিনদেশি ভাবার উপায় নেই।
মধুমঞ্জরি বাড়ির ফটক বা ঘরের ওপর বেশ জাকিয়ে বসে। শীতে পাতা কমে যায়। সাদা ও লাল থোকা থোকা ফুল। পাপড়ির নলটি বেশ লম্বা। বছরে কয়েক দফা ফুল ফোটে। ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-লাল ফুল সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সন্ধ্যায় নতুন ফুল ফোটে আর হালকা সুবাস ছড়ায়।
গাছ ও ফুল প্রেমিক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি একজন বাগানি। তবে মধুমঞ্জরিকে মাধবীলতা বলে জানতাম। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের মাধ্যমে এ গাছটা চিনেছি। ওই শিক্ষকরা মাঝে মাঝে ছাত্রদের নিয়ে রমনায় আসেন।
মধুমঞ্জরি বারোমাসি ফুল গাছ, সারাবছর কিছুদিন পরপর ফুল ফোটে। বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ। মধুমঞ্জরির গোড়া এবং শেকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। লতা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয়। খুব ক্বচিৎ ফল হয়। মধুমঞ্জরি কষ্টসহিষ্ণু গাছ, সহজে মরে না। ইট কাঠের ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবনের গা বেয়ে নিচে থেকে ছাদ পর্যন্ত এই গাছ শোভা ছড়াতে দেখা যায়। কুঞ্জ তৈরির জন্যে মধুমঞ্জরি আদর্শ গাছ। গাছটি প্রায় ৭০ ফুট পর্যন্ত বেয়ে উঠতে পারে। উদ্ভিদটি কাষ্ঠল, পত্রমোচী, আরোহী উদ্ভিদ। লতা খুব শক্ত, কয়েক বছর হয়ে গেলে মোটা হয়।
মধুমঞ্জরির লতা খুব শক্ত, ধূসর রঙের, কয়েক বছর হয়ে গেলে মোটা হয়ে মোচড়ানো, দড়ির মতো হয়। খসখসে সবুজ রঙের পাতাগুলি বিপরীত দিকে সাজানো থাকে। মধুমঞ্জরি ফুল থোকায় থোকায় ফোটে, ফুলের রঙ সাদা থেকে ধীরে ধীরে বদল হয়ে গোলাপি ও শেষে লাল হয়। ফুলের পাপড়ি পাঁচটি। ফুলে মৃদু সুগন্ধ আছে। বিচিত্র রঙের জন্য প্রজাপতি আর মৌমাছিদের খুব প্রিয় মধুমঞ্জরি লতা।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইআ