Thursday 13 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২৫ ২১:৩৭

ধরা আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভা

ঢাকা: বাংলাদেশে নদ-নদীর বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য উঠে আসে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে। আমরা জানি, নদী কারা দখল করেছে এবং এর জন্য কী করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। কিন্তু নদীর ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। নয়তো গত আট মাসে কেন তারা জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর করল না। ১৯৯৭ সালে যখন জাতিসংঘ এই আইন করল তখন সেই কমিটিতে বর্তমান সরকারের দুজন উপদেষ্টা ছিলেন। তবুও কেন এখনো এটি হলো না? সরকার কেন দেরি করছে?’

নদী বিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কারা দায়ী তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নদী বিপন্নের কারণ। তাই নদী রক্ষায় অবিলম্বে জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর, ডেল্টা প্ল্যানের পর্যালোচনা এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।’

আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় প্রসারিত নদীকে সরু করা হচ্ছে, বিভিন্ন নদীবিনাশী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। একইভাবে দেশের মানুষের ক্যানসারসহ বিভিন্ন যে মারণঘাতি রোগ হচ্ছে, এর জন্যেও নদীদূষণ দায়ী।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় অনেক এমপি, উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি নদী দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তখন না হয় আমরা পারিনি, কিন্তু নতুন বাংলাদেশে এসে কেন বলতে হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের পর নদীতে দখল বেড়েছে, খাল দখল বেড়েছে!’

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বাংলাদেশের শুদ্ধির জন্য, সেই শুদ্ধির সঙ্গে কারা আপোস করল? যারা দখলদার, ব্যবসায়ী তারা নিজেদের জিডিপির কনট্রিবিউটর নাম দিয়ে যেভাবে দূষণ করেছে, সেই দূষণের যদি আমরা অর্থনৈতিক হিসেব করি তাহলে তা তাদের কন্ট্রিবিউশানের থেকে অনেক বেশি। তারা পরিবেশ প্রতিবেশ হত্যার সঙ্গে জড়িত।’

আদিল মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা দেখছি, নতুন দখলদাররা বিপুল উৎসাহে এখন দখল করছে। কারণ এখন প্রসাশন দুর্বল, পুলিশ কাজ করে না। নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত তৈরি হয়েছে। তারা এখন নতুনভাবে দখলে নেমেছে। আর সরকার তাদের অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তারা (সরকার) বলছে তাদের লোকবল নাই। এই ২০ কোটি মানুষের দেশে নদী কমিশন চালানোর মতো কোনো যোগ্য লোক নাই! সেক্রেটারি দিয়ে চালাতে হয়। এ জন্য কী বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে? এই সরকার কেন এই কমিশনকে রক্ষার জন্য একজন যোগ্য লোক পেল না?’

পশুর নদী রক্ষাকারী মো. নূর আলম এসকে বলেন, নদী ও জলাশয় দখলের ভয়াবহতা আজ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশে এমন কোনো নদী বা জলাধার নেই যা দখলদারদের লোভের শিকার হয়নি। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অনিয়ন্ত্রিত দখলপ্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির প্রভাবশালী অসাধু চক্র নদ নদী দখলবাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বালু পাথর উত্তোলনের ফলে নদীগুলো আরও দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।‘

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোশাইদা সুলতানা বলেন, ‘নদীগুলোর দূষণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নদী দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে শিল্প বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য এবং কৃষিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপকরণ। মৎসজীবী সম্প্রদায় এবং নদী তীরবর্তী মানুষ এই দূষণের কারণে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। নদী রক্ষা আইন থাকলেও বাস্তবে তার কার্যকর হচ্ছে না।’

নদী রক্ষার্থে ৯টি দাবি তুলে ধরা হয় আলোচনায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হচ্ছে, আগামী ২ মাসের মধ্যে দেশের সকল নদ-নদী ও জলাধারের দখলদারদের তালিকা ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। সর্বোচ্চ ৩-৪ মাসের মধ্যে নদ-নদীর ও জলাশয় দখলমুক্ত করতে হবে এবং দখলদারদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া নদী রক্ষার আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করার দাবি জানানো হয়।

ধরার সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই

ড. আনু মুহাম্মদ ধরা নদী দখল নদী-রক্ষা বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সংস্কার কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর