Sunday 16 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু নির্যাতনের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি পাঁচ বেসরকারি সংস্থার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:২৩ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:৫৪

ঢাকা: শিশু নির্যাতন আইনের সংস্কারসহ শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলার দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা।
সংস্থাগুলো বলেছে, অপরাধীরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রোববার (১৬ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা এসব দাবি জানায়। সংস্থাগুলো হচ্ছে- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, প্ল্যান ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশ ও সেভ দ্য চিলড্রেন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গড়ার পাশাপাশি মহিলাবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মতো ‘শিশুবিষয়ক সংস্কার কমিশন’ প্রতিষ্ঠাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১৭ দফা দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর প্রোগ্রাম অ্যান্ড প্লানিং পরিচালক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, প্লান ইন্টারন্যশনাল বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা ঘোষ, সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকারবিষয়ক সুশাসনের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতোপূর্বে একাধিকবার সরকারের কাছে এসব দাবি জানানো হয়েছে। আমরা চাই, অপরাধীরা যেন আইনের ফাঁক ফোকড় দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। কারণ অপরাধীরা প্রায়শই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হওয়ায় তারা পুনর্বার নির্যাতনে লিপ্ত হতে থাকে। এর সবচেয়ে মর্মান্তিক উদাহরণ হলো- ২০১৬ সালে ৫ বছর বয়সী একটি শিশুকে নির্মমভাবে ধর্ষণের দায়ে কয়েক বছর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন অপরাধীর সাম্প্রতিক জামিন।

বিজ্ঞাপন

মাগুরায় ৮ বছর বয়সী শিশুর সাম্প্রতিক নির্মম ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিকট আত্মীয় এমনকী নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নয় শিশুরা। যদিও অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়েছে, তবে আমরা আশু ও যথাযথ তদন্ত, বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিবারের সদস্য এবং নিকট আত্মীয়দের ধারা যৌন অসদাচরণের বিষয়ে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। এই অপরাধীরা নীরবতার একটি সংস্কৃতিতে লালিত হচ্ছে যেখানে নিকট আত্মীয়দের দ্বারা সংঘটিত এমন কর্মকাণ্ড প্রকাশ করা একটি অসম্মান হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এটি মেয়েশিশুদের পাশাপাশি ছেলেশিশুদের জন্যও একটি বাস্তবতা। যারা অপরাধী তাদের দোষারোপ না করে উল্টো অপরাধের শিকার ব্যক্তিকেই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়। শিশুদের সুরক্ষা ও সুষ্ঠু বিকাশের মতো এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সরকারের কাছে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এদিকে, শিশুরা যৌন নির্যাতন, বিপজ্জনক শ্রম, অবহেলা, অনলাইন সহিংসতা এবং অন্যান্য সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। শিশুরা তাদের বাড়িয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জনসমক্ষে, কোথাও নিরাপদ নয়। শিশুদের নিরাশর ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুনি কার্যকর বা জবাবদিহিমূলক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা চাই সরকার অনতিবিলম্বে শিশুদের সমস্যাগুলিকে অগ্রাধিকার দিক, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ আমাদের সবার উপলব্ধি করা অত্যাবশ্যক যে শিশুর প্রতি যে কোনো নির্যাতন ও সহিংসভা তার মনে এতটাই গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলে যে, তার স্বাভাবিক বিকাশ ও মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণের পথ রুদ্ধ হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে- আইনের সংস্কার ও দ্রুত বিচার, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলাগুলির দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন; শিশু বিষয়ক অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা; শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মত একটি শিশু বিষয়ক অধিদফতর স্থাপন করা- যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করবে; শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক একটি সংস্কার কমিশন জরুরী ভিত্তিতে গঠন করা হোক, যা সকল আশীজনের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করবে এবং অন্যান্য সংস্কার কমিশনের মতো তা প্রধান উপদেষ্টাকে হস্তান্তর করবে।

পরিবারে সদস্য ও নিকট আত্মীয়দের দ্বারা যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিগ্রহণ করা, যেন ভুক্তভোগীরা নিরাপদে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারে। শিশু সুরক্ষা আইন প্রয়োগ শিশু সুরক্ষা প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করা; শিশু নির্যাতন ও সহিংসতা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা মূল্যায়নে একটি স্বতন্ত্র মনিটরিং সেল গঠন; মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, নির্যাতিত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করা; সকল নাগরিক, বিশেষ করে গ্রাফিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা; ক্ষতিকর সামাজিক রীতি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার সাস্কৃতিক পরিবর্তনে প্রচার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা; সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালী ও সহজপ্রাপ্য করা- যার মধ্যে কাউন্সেলিং, আইনি সহায়তা, ও পুনর্বাসন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে কমিউনিটি নেতা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সক্রিয় বা যুক্ত করা; সহিংসতার শিকার শিশু, শিশুর পরিবার ও ঘটনার সাক্ষীদের জন্য সুরক্ষা আইন ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা; হটলাইনে ১০৯ ও ১০৯৮ নম্বরে আনা অভিযোগ এবং এর পরবর্তী ব্যবস্থা প্রমাণ প্রক্রিয়া সম্পকে জবাবদিহিতামূলক নিয়মিত রিপোর্ট প্রকাশ করা।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস

পাঁচ এনজিওর সংবাদ সম্মেলন শিশু নির্যাতন

বিজ্ঞাপন

মজাদার সোনালি মিষ্টি
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর