Sunday 16 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাঁদা না দিলে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘ছোট সাজ্জাদ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৫ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৬

গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকার মানুষদের আতঙ্কের নাম সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। বায়েজিদসহ এর আশপাশের এলাকায় কোথাও কেউ স্থাপনা নির্মাণ করলেই চাঁদার জন্য হাজির হতেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তার দিকে অস্ত্র তাক করে দিতেন হুমকি। দিনে-দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে সহযোগীদের নিয়ে দিতেন শোডাউন।

সম্প্রতি পুলিশের এক ওসিকে নগ্ন করে পেটানোর হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এ শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ধরতে নগদ অর্থ পুরষ্কারের ঘোষণাও করা হয়েছিল। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন সেই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, শনিবার (১৫ মার্চ) রাতে বউকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ঈদের বাজার করতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।

রোববার (১৬ মার্চ) দুপুরে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।

সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাজ্জাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে খোদ পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কালারপোল এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে গুলি করেন সাজ্জাদ। ওই ঘটনার একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর নগরীর অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে পুলিশ ধরতে গেলে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান তিনি। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি ডাকাতির প্রস্তুতির সময় তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসিকে হুমকি দিয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘ওসি আরিফ দেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তাকে আমি ধরে ন্যাংটা করে পেটাব। ওসি আরিফ থানায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। আমার স্ত্রীকে আটক করে জেলে নিয়ে গেছে। তাকে আমি ছাড়ব না। পুলিশ না হলে তাকে আমি অনেক আগেই মারধর করতাম। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা করি বলেই চুপ করে আছি।’ এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ হোসেন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ মোট ১৫টি মামলা আছে। তিনি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে চট্টগ্রামে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। দুবাইয়ে থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বড় সাজ্জাদ তাকে সবকিছু নির্দেশনা দিতেন। ছোট সাজ্জাদ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভবন নির্মাণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মালিকদের কাছ থেকে বিপুল অংকের চাঁদা দাবি করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ

কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাড়িতে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। তাকে আদালতে হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘ছোট সাজ্জাদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। সে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী আসামি। সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার আলোচিত ডাবল মার্ডার মামলার আসামি। চান্দগাঁও থানারও একটি খুনের মামলার আসামি সে। বায়েজিদ, চান্দগাঁও ও মোহরা কেন্দ্রিক যেসব ঝুট ব্যবসা সেটার নিয়ন্ত্রণ করতো সে।’

‘আমি সিএমপিতে যোগ দেয়ার পর থেকেই তাকে ধরার চেষ্টা করছি। একবার তাকে ধরতে তার বাসায় অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। সে কতবড় দুর্ধর্ষ, পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে আরেকটি ভবনে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। তার ছোড়া গুলিতে ওই ভবনের দারোয়ান ও পুলিশের সোর্স আহত হন।’

তিনি বলেন, ‘এরপর সে সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসে আমাদের বায়েজিদ থানার ওসিকে লাঞ্চিত করার হুমকি দেয়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেই, যথেষ্ট হয়েছে। আমি সিএমপি কমিশনার হিসেবে তাকে ধরিতে দিতে পারলে উত্তম অর্থ পুরষ্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়। তাকে ধরতে পুলিশ হেডকোয়াটার্সের ইন্টালিজেন্স টিম আমাদের অভূতপূর্ব সহযোগিতা করেছে।’

হাসিব আজিজ বলেন, ‘আমাদের সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার আমিরুল ইসলাম একটি ট্রেনিং কোর্সে সাতদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ হেডকোয়াটার্সের দেওয়া তথ্যে তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ তার স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার (১৫ মার্চ) রাত আটটার বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে বাজার করতে গিয়েছে। সিএমপির একটি টিম আগে থেকেই ঢাকায় ছিল। তথ্যে পেয়ে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। স্থানীয়রাও সাহায্য করেছে তাকে ধরতে। এরপর তাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

গ্রেফতার করার সময় তার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে যেহেতু ঢাকায় ছিল তার আত্মবিশ্বাস ছিল তাকে ওখান থেকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না। তাই সে ওখানে অস্ত্র নিয়ে যায়নি। নিরস্ত্র ছিল সে। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার সহযোগীদের ধরব। কোথায় কোথায় অস্ত্র আছে সেটা তার কাছ থেকে তথ্যে নিয়ে উদ্ধার করব।’

সাজ্জাদের গ্রেফতারের পর তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে কি না এমন প্রশ্নে হাসিব আজিজ বলেন, ‘কোনোভাবেই না। আমাদের শহর এলাকায় কোনো ধরণের সন্ত্রাসীকে আমরা ছাড় দেব না।’

সাজ্জাদকে গ্রেফতার করতে এত সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘সাজ্জাদ তো আর সবার মতো না। সে একজন অপরাধী। সে সবসময়ই পালিয়ে বেড়ায়। তাকে ধরা কঠিন ছিল।’

চট্টগ্রামের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী বার্মা সাইফুলকে গ্রেফতার করতে সিএমপির কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বার্মা সাইফুল এখন চট্টগ্রামে নেই। সে এ মুহুর্তে ঢাকার কোনো এলাকায় আছে। চট্টগ্রাম ঢুকলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। আর ঢাকায় তার লোকেশন যদি আমরা বের করতে পারি তাহলে সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হবে।’

সারাবাংলা/আইসি/এনজে

গ্রেফতার চাঁদা সন্ত্রাসী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর