Sunday 16 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ত্রয়োদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিবি’র কংগ্রেস জুলাইয়ে, সোমবার বৈঠক

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৫ ২২:৪২ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ২২:৪৬

ঢাকা: আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী জুলাইয়ের শেষ দিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতন এবং সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবারের কংগ্রেস এগিয়ে আনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক আগামী বছর ফেব্রয়ারীতে দলটির কংগ্রেস হওয়ার কথা।

উল্লেখ্য, প্রতি চার বছর পরপর দলটির কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর চারদিনব্যাপী চলবে দলটির কংগ্রেসের কার্যক্রম। এবারের কংগ্রেস দলটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সিপিবি’র নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৭ মার্চ) প্রেসিডিয়াম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডিয়াম বৈঠকে কংগ্রেস দিন তারিখ ঠিক করাসহ দেশের সার্বিক বিষয় ও ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর চলতি মাসে ২১ ও ২২ তারিখ দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে প্রেসিডিয়াম বৈঠকের সিন্ধান্তসমূহসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

সূত্র জানায়, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কংগ্রেসের আগে শাখা সম্মেলন, জেলা সম্মেলন, উপজেলা ও থানা সম্মেলন শেষ করতে হবে। এছাড়া দলটির কার্যক্রমের একটি ডকুমেন্টরীও নির্মাণ করতে হবে। ওই ডকুমেন্টরীর ওপর তৃণমূল থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মতামত নিতে হবে। এগুলোর কোনোটাই এখনও শুরু হয়নি।

সূত্র মতে, দলের মধ্যে বিভাজনের কারণে একটি গ্রুপ এসব সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে কংগ্রেস করতে চাচ্ছে। মূল গ্রুপটি কমিউনিস্ট পার্টি যাতে নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুতি না হয়, কেউ যাতে পার্টিতে বিভাজন সৃষ্টি করতে না পারে- সে দিকে খেয়াল রেখে সামনের দিকে এগোচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

কংগ্রেস কবে হবে- জানতে চাইলে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন জানান, আগামী জুলাই মাসের শেষের দিকে দলের কংগ্রেস করার প্রাথমিক সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিপিবি’র সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, জুলাইয়ের ২৫ থেকে ২৮ তারিখ এ চার দিন দলের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কংগ্রেস এগিয়ে আনা হয়েছে।

কংগ্রেসে দলের বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে, এমন গুঞ্জন রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্টির মধ্যে কোন বিভাজন নেই। যা হচ্ছে তা ফেসবুকে। সিপিবির আদর্শ ও নীতি থেকে কেউ বিচ্যুতি হবে না।

উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই ভারতে ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির শিকার কমিউনিস্ট পার্টি বেশিরভাগ সময়েই গোপনে কাজ করেছে। ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিকে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয়, যা পরে ১৯৪২ সালে প্রত্যাহার হয়। নিষিদ্ধ অবস্থাতেই পার্টির নেতৃত্বে ১৯৩৯ সালে বোম্বেতে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধবিরোধী ধর্মঘট সংগঠিত করে। ওই ধর্মঘটে ৯০ হাজার শ্রমিক অংশ নেয়।

চল্লিশের দশকে পার্টি সমগ্র ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত পার্টির নেতৃত্বে ভারতজুড়ে সংগঠিত হয় তেভাগা, নানকা, টঙ্ক, তেলেঙ্গনা, কেরালায় পুন্নাপা ভায়ালা আন্দোলন ও কায়ুর আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। ভারত ভাগের পর ১৯৪৭ সালে ঢাকায় ৭ সদস্যের একটি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত কাউন্সিলররা ৬ মার্চ পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। একইদিনে পূর্ববঙ্গের কাউন্সিলররা ১৯ সদস্যের পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক কমিটি গঠন করেন, যার সম্পাদক নির্বাচিত হন খোকা রায়।

১৯৪৯-৫০ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ সরকার কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে অবিরাম দমনমূলক ব্যবস্থা চালাতে থাকে। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট বন্দিদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে সাতজন নেতা নিহত এবং ৩১ জন গুরুতর আহত হন। ১৯৫০ সালে রমেন মিত্র ও ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ ও নাচোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের এবং সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষনেতাদের কারাবন্দি করলে পশ্চিম পাকিস্তানে পার্টির কর্মকাণ্ড প্রায় অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন চলমান থাকে।

৫২-র ভাষা আন্দোলনে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। ’৫৪ সালের নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন দেয়। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পার্টি মনোনীত সাত প্রার্থীর মধ্যে চারজন নির্বাচিত হন। একই বছর ৯২-ক ধারা জারি এবং প্রদেশে গভর্নরের শাসন চালু হলে কমিউনিস্ট পার্টি আবার নিষিদ্ধ হয়। এতে পার্টির নেতাকর্মীরা চরম নির্যাতনের মুখে পড়েন।

১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে কমিউনিস্ট পার্টি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালের গণজাগরণ ও অসহযোগ আন্দোলনেও পার্টির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। পার্টির নেতা কমরেড মণি সিংহ প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়নের সরাসরি পরিচালনায় একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পার্টির নতুন নাম হয় ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’। ১৯৭৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে দলের একটি নতুন গঠনতন্ত্র গৃহীত হয়। কংগ্রেসে মণি সিংহকে সভাপতি ও মোহাম্মদ ফরহাদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে কমিউনিস্ট পার্টি। ওই সময় পার্টির নেতাকর্মীরা সামরিক সরকারের কঠোর নিপীড়নের শিকার হন। পার্টির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার হন। অনেকের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে কমিউনিস্ট পার্টি ফের নিষিদ্ধ হয়। পরের বছর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও পার্টির নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়া হয়।

সিপিবি ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গঠিত ১৫ দলীয় জোটে যোগ দেয়। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি পাঁচটি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানে সিপিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিলোপবাদীরা পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পার্টির কংগ্রেসে শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়।

এরপর ১৯৯৫ সালের ৭-৮ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে ১৭-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কংগ্রেস এবং ২০০৩ সালে অষ্টম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ৭-৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত নবম কংগ্রেসে পার্টির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়। মঞ্জুরুল আহসান খান সভাপতি এবং মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/আরএস

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর