গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম ঈদ, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত নগরবাসী
১৭ মার্চ ২০২৫ ২২:৫৭
ঢাকা: গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই প্রথম ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশের মানুষ। তবে এবারের ঈদুল ফিতর ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত রাজধানী ঢাকার সাধারণ মানুষ। কারণ, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে। সেজন্য ঘর ফাঁকা রেখে গ্রামে যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে।
সাধারণ জনগণ ও আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার দাবি, এই চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে পতিত আওয়ামী লীগের যোগসাজোশ রয়েছে। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের পর পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ওই সময় কিছু অপরাধীকে আটকও করা হয়। সেই অপরাধীদের খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে, তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটনো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও বনশ্রীসহ বেশকিছু এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আর অন্যান্য এলাকায়ও সুযোগ বুঝে ঘটানো হচ্ছে এসব ঘটনা। অপরাধপ্রবণ এলাকাসহ রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু তারপরও ছিনতাই, আক্রমণ ও ডাকাতির ঘটনা থামানো যাচ্ছে না। ফলে ঈদের সময় ফাঁকা নগরীতে নিরাপত্তা নিয়ে বেশ আতঙ্কিত রাজধানীবাসী।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা রওশনারা টুম্পা। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করা হচ্ছে। একধরনের কিশোররা এলাকায় অস্ত্র নিয়ে বেপরোয়া চলাফেরা করছে এবং যাকে মন চাচ্ছে কুপিয়ে সব ছিনিয়ে নিচ্ছে। ফেসবুকেও আমরা এসব ভিডিও দেখেছি। এর মধ্যে চলে এলো ঈদ। অনেকেই ঈদে গ্রামের বাড়ি যাবে। সে সময়টাতে ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাবে কিনা- সেটি নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।’
রাজধানীর উত্তরায় বাস করেন অভি জান্নাত। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর এবারের ঈদ নিঃসন্দেহে একটু ভিন্ন অন্যবারের তুলনায়। কিন্তু উত্তরায় কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপক উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রায়ই এখানে দুঘর্টনা ঘটছে। ফাঁকা বাসা রেখে ঈদে পরিবার নিয়ে গ্রামে যেতে ভয় লাগছে।’
শহিদুল্লাহ বসবাস করেন রাজধানীর বনশ্রী এলাকায়। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে এই এলাকার ছিনতাইয়ের ঘটনা পুরো দেশ দেখেছে। নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নানান ছব্দবেশে মানুষদের নিরাপত্তাহীন করার চেষ্টা করছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে ও মানুষ মেরে সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলতে চাইছে। বউ-সন্তান নিয়ে বাড়ি যাব, কিন্তু ভয় কাজ করছে। ঈদে ফাঁকা বাসায় চুরি-ডাকাতি নিয়ে আমি খুবই আতঙ্কিত।’
অপরদিকে ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে বাসাবাড়ি, দোকানপাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ফলে সাধারণ মনুষের মাঝে একটু বাড়তিভাবেই আতঙ্ক কাজ করছে।
সাজ্জাত আলী বলেন, ‘যখন বাড়ি যাবেন, তখন দয়া করে আপনার বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজ দায়িত্বে করে যাবেন। এমন একটি বড় শহর, এ শহরে নানান পেশার, নানান গোষ্ঠীর এবং প্রচুর ভাসমান লোক বসবাস করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত লাখো মানুষ আসে, আবার চলেও যায়। এরকম একটি শহরে কিছু ঘটলে আপনারা অবশ্যই আতঙ্কিত হবেন না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সরাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে কিছু বাস্তবতাও জড়িত। বিশেষ করে বড় শহরে যারা কর্মের জন্য থাকে তাদের বেশিরভাগই ঈদের সময়ে গ্রামে যান, যেটা রমজানের ঈদে সবচেয়ে বেশি। যখন ঢাকা শহর ফাঁকা হয়ে যায় তখন চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেশি বাড়ে। তবে এবারের বাস্তবতা একটু আলাদা। কারণ, এ ধরণের অপরাধ ঈদের আগেই বেশি ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘এবার যারা বাড়ি যাবেন, তারা ঢাকার বাসা নিয়ে অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি ভাববেন। কারণ, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পরিপূর্ণভাবে স্বাভাবিক হয়নি। অপরাধীরা নানাভাবে সক্রিয়। ছোট অপরাধীদের ভেতরে বড় অপরাধীরা সুপ্ত অবস্থায় থাকবে। যেহেতু বেশি সংখ্যক মানুষ ঢাকার বাইরে যাবে সেহেতু চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ির দারোয়ান বা সিকিউরিটি এ ধরনের ডাকাতি বা চুরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ। পুলিশের টহল কার্যক্রম এবার বাড়াতে হবে। এটা কাগজে কলমে না, বাস্তবে করতে হবে। কার্যকরভাবে এটা বাড়াতে না পারলে এই সময়টাতে অপরাধ বেড়ে যাবে। এবারের ঈদে চুরি ও ডাকাতির সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, একদিকে অপরাধীরা আগে থেকেই সক্রিয়, অপরদিকে ঈদের সময়ে ফাঁকা শহরে অপরাধ করার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে।’
সারাবাংলা/এমএইচ/পিটিএম