চট্টগ্রাম ব্যুরো: এবার রমজান এবং প্রকৃতির গরম এসেছে একসঙ্গে। এর ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু রমজানের মধ্যভাগ পার করা সময়টুকু চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিভাগ সুন্দরভাবেই সামাল দিয়েছে। সব আশঙ্কাকে পেছনে ফেলে এবার লোডশেডিং নিয়ে চট্টগ্রামবাসীকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়নি, রাস্তায় নেমে ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখাতে হয়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ পাওয়ায় এবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হচ্ছেন তারা। এমনকি শেষ সপ্তাহজুড়ে চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ‘জিরো’। যদিও বিভিন্ন গোলযোগের কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে, কিন্তু সেটা উৎপাদন বা সরবরাহ সংকটের কারণে নয়।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, (পিডিবি) চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের পরিসংখ্যানে, শুক্রবার (১৪ মার্চ) থেকে বুধবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত গত ছয়দিন চট্টগ্রামে লোডশেডিং এর চিত্র শূন্য শতাংশ দেখা গেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা গড়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াটের মতো। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে চাহিদার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও সারা দেশে দৈনিক চাহিদার ওপর লোডশেডিং হবে কি-হবে না তা নির্ভর করে। সারাদেশে যদি চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ঘাটতি বেশি থাকে তাহলে লোডশেডিং করতে হয়। তবে এখন চট্টগ্রাম অঞ্চল চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে। তাই লোডশেডিং হচ্ছে না।
পিডিবি, চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) আকবর হোসেন জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরমের তীব্রতা এখনও বাড়েনি। তবে বিদ্যুতের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আমাদের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি হলেও সেটা জাতীয় গ্রিডে সরাসরি যুক্ত হয়। আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাই। এখন লোডশেডিং নেই বললেই চলে। বলতে গেলে একদম শূন্যের কোটায়। সামনেও তেমন লোডশেডিং হবে বলে মনে হয় না।’
এদিকে বুধবারের (১৯ মার্চ) পিডিবির উৎপাদন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ ইউনিটের মধ্যে এক নম্বর ইউনিট চালু আছে। এক নম্বর ইউনিট থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হয়েছে ১৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
এছাড়া দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ৩৪, হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ৪০, ইউনাইটেডে ১১ ও ১৫, জুলধায় ১৫৮, শিকলবাহা বারাকা কেন্দ্রে ৩৪, বারাকা কর্ণফুলীতে ১, আনলিমা কেন্দ্রে ১৭, এনার্জি প্যাক কেন্দ্রে ১৮, বাঁশখালীর এস এস পাওয়ার প্লান্টে ৬১২ ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১৯ মার্চ) চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। এছাড়া শুক্রবার (১৪ মার্চ) এক হাজার ৭৬, শনিবার (১৫ মার্চ) এক হাজার ১৬৮, রোববার (১৬ মার্চ) এক হাজার ১৫৮, সোমবার (১৭ মার্চ) এক হাজার ১৫৮ ও মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক হাজার ১৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাহিদা ছিল, যা পুরোপুরি জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হয়েছে।
এর বিপরীতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ১৪ মার্চ দুই হাজার ২৩৩, ১৫ মার্চ দুই হাজার ৫৭৯, ১৬ মার্চ দুই হাজার ৭৮৮, ১৭ মার্চ দুই হাজার ৩৪১, ১৮ মার্চ এক হাজার ৮২৪ ও ১৯ মার্চ এক হাজার ৯৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, যা সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
পিডিবি কর্মকর্তা আকবর হোসেন জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে এখন পর্যন্ত আমরা চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি। সামনে গরম বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। সেসময়ও যদি জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তাহলে চট্টগ্রামবাসীকে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’