ডিসেম্বরে ভোটের টার্গেট
জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি সারতে চায় কমিশন
২১ মার্চ ২০২৫ ২২:৩৬
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার আগের কাজগুলো ধীরে ধীরে গুছিয়ে আনছে কমিশন। আর এই গুছিয়ে আনার কাজ জুলাই মাসের মধ্যেই শেষ করতে চায় ইসি। যদিও এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংস্কারের কমিশন ইসি নিয়ে কোনো মতামত দেয়নি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সারাবাংলাকে জানান, ‘ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন করতে হয় তাহলে কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবকাজ এখন শুরু করতেই হবে। এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতসহ নানান বিষয়ে কাজ গুছিয়ে নিতে কাজ করছে কমিশন।’
তিনি জানান, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বাস্তবতা মিলিয়ে কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে কমিশনকে। তবে তাদের এসব কাজ এগিয়ে নিতে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্তের দিকে।
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিশন ডিসেম্বরকে ধরেই নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে। ভবিষ্যৎ নির্বাচন যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সেজন্য ইসির সঙ্গে সরকার ও ঐক্যমত কমিশনের সমন্বয় প্রয়োজন। কেননা কমিশনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হলে এখনই সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, কেনাকাটা, প্রশিক্ষণ এসব নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কারণ, এই কাজগুলো এখন শুরু করলেও তিন-চার মাস সময় লাগবে শেষ হতে। কিন্তু কমিশন এই কাজগুলো কোন আইন অনুযায়ী করবে। কমিশনের বিদ্যমান আইন, নাকি সংস্কার কমিশনের আইন- কোন আইনে কাজ করবে তারা? নাকি সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবগুলো পাস হওয়ার পর কাজ শুরু করবে তারা। এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক কোনো নির্দেশনা নাই।’ তাই নির্বাচনের কাজগুলো যেন ঝুলে না যায় সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে খুব তাড়াতাড়ি উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মত তার।
নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে শিগগিরই নিবন্ধিত দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করবে কমিশন। সুস্থ নির্বাচনের জন্য সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐক্যমত্বে আসাটা জরুরি বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল লক্ষই হলো সংস্কার। তাই ল্যাক অব কোঅর্ডিনেশনের জন্য তারা যেন এই লক্ষ্য থেকে সরে না যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কমিশনে সীমানা পুননির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি এবং উপকারভোগী পর্যায়ে আলোচনাবিষয়ক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আইন সংশোধনের পরই কার্যক্রমে হাত দেবে সংস্থাটি। ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে- ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। ৬৪ জেলা থেকে চারশর মতো আবেদন এসেছে। এসব আবেদনে অনেকেই ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যেতে চান।
সর্বশেষ গত হালানাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন এবং নারী ভোটার ছয় কোটি তিন লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন। আর হিজড়া ভোটার ৯৯৪ জন।
সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম