মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন শিক্ষা দফতর বন্ধের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। নির্বাচনি প্রচারের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে কিছু রক্ষণশীল মহলের লক্ষ্য ছিল।
শিক্ষা দফতরকে ব্যর্থতার নজির হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেছেন, দফতরের অধীনে থাকা বাজেট রাজ্যগুলোর হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যত দ্রুত সম্ভব এটি বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ তবে হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছে, পুরোপুরি দফতর বিলুপ্ত করতে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। শিক্ষা দফতর বন্ধ এবং সম্প্রতি ঘোষিত ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই ঠেকাতে বিভিন্ন পক্ষ আদালতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) হোয়াইট হাউসে একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় শিক্ষায় বেশি ব্যয় করে, অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা তালিকার একেবারে নিচের দিকে অবস্থান করছে।’
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রশাসন আইনসিদ্ধ সীমার মধ্যে থেকে শিক্ষা দফতরের কিছু অংশ বন্ধের পরিকল্পনা করছে। তবে আদেশের বিস্তারিত কোনো কর্মপদ্ধতি প্রকাশ করা হয়নি।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প শিক্ষা সচিব লিন্ডা ম্যাকমাহোনের প্রশংসা করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তিনিই শেষ শিক্ষা সচিব হবেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তার জন্য প্রশাসনের অন্য কোনো দায়িত্ব খুঁজে বের করব।’
ট্রাম্পের স্বাক্ষরের পরপরই লুইসিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর বিল ক্যাসিডি শিক্ষা দফতর বিলুপ্তির লক্ষ্যে একটি বিল আনার ঘোষণা দেন। তবে সিনেটে রিপাবলিকানদের মাত্র ৫৩-৪৭ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং একটি ফেডারেল দফতর বন্ধ করতে ৬০ ভোট প্রয়োজন, যা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
শিক্ষা দফতর ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি মূলত শিক্ষার্থী ঋণ ব্যবস্থা পরিচালনা করে ও নিম্নআয়ের শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, এই সংস্থা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক, জাতিগত ও যৌনতা বিষয়ক মতাদর্শগত শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রভাবিত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্থানীয় ও রাজ্য সরকারের পরিচালিত পাবলিক স্কুলে পড়ে। সাধারণ ভুল ধারণা হলো, ফেডারেল শিক্ষা দফতর এসব স্কুল পরিচালনা করে এবং পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে। কিন্তু বাস্তবে, এটি মূলত রাজ্য ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হয়।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মোট তহবিলের মাত্র ১৩ শতাংশ ফেডারেল সরকার থেকে আসে, বাকি অর্থ রাজ্য ও স্থানীয় কর ব্যবস্থা থেকে সংগ্রহ করা হয়।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘কেউ আমলাতন্ত্র পছন্দ করে না, কিন্তু তা কমানোর জন্য শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আক্রমণ করা গ্রহণযোগ্য নয়।’
রক্ষণশীল মহল ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা দফতর বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এটিকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে সফল হননি।