Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল
কাগজে-কলমে শয্যা বাড়লেও বাড়েনি সেবার পরিধি

ডিস্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট
২৩ মার্চ ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫ ১০:২১

নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল

নীলফামারী: নীলফামারী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার চিত্র উদ্বেগজনক। ২০১৯ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, রোগীরা সেই সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। বরং চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে আসার পর প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম তারা পাচ্ছেন না, বাহির থেকে কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন আজেদুল ইসলাম। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি প্রেসক্রিপশন, কিন্তু দেওয়া হয়নি কোনো ওষুধ। বাধ্য হয়ে আজেদুল বাহির থেকে ওষুধ কিনে আনেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ সময় পার হলেও কোনো ডাক্তার তার ভাইকে দেখতে আসেননি। এমনকি গুরুতর আহত রোগীর জন্য একটি বেডেরও ব্যবস্থা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

একই অবস্থা জিকরুল ইসলামের। ছোট ভাইকে এপেনডিসাইটিসের সমস্যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর থেকে বিনামূল্যে কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন পাননি। স্যালাইন থেকে শুরু করে সাধারণ ক্যানুলাও বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। তার ভাষায়— “আমরা গরিব মানুষ, সরকারি হাসপাতালে আসি বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবো বলে। কিন্তু যদি সবকিছু কিনতেই হয়, তাহলে বেসরকারি হাসপাতালে গেলেও একই টাকা খরচ হবে, কিন্তু সেবা অন্তত ভালো পাবো।”

পিংকি আক্তার তার ছেলেকে নিয়ে ভোর ৬টায় জরুরি বিভাগে আসেন। ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা ওষুধের একটি তালিকা ধরিয়ে দেন এবং বাহির থেকে কিনে আনতে বলেন। ওষুধ আনানোর পরই শুরু হয় চিকিৎসা। এরপর চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও রোগীর পরিবার বুঝতেই পারেনি কী পরীক্ষা করাতে হবে।

বিজ্ঞাপন

‘আমি বারবার নার্সদের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কেউ কোনো সঠিক নির্দেশনা দেয়নি। দুপুর ৩টা বেজে গেলেও আমার ছেলের পরীক্ষার কোনো কাগজ পাইনি। রোগীর জন্য পরীক্ষা জরুরি হলে অন্তত সেটার নির্দেশনা দেওয়া উচিত ছিল।’—বলেন পিংকি আক্তার।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রহিম স্বীকার করেন যে ওষুধ সরবরাহ নিয়ে সমস্যা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অনেক ওষুধ আমাদের ইডিসিএল (Essential Drugs Company Limited) থেকে কিনতে হয়, কিন্তু তারা সময়মতো সরবরাহ করতে পারে না। তাছাড়া, শয্যা সংখ্যার তুলনায় রোগীর চাপ বেশি থাকায় আমাদের বাজেট দিয়ে সবকিছু মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে নিয়মিত ওষুধের ঘাটতি দেখা দেয়।’

এদিকে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু-আল হাজ্জাজ আরও বিস্ময়কর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
‘এই দেশটা বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখানে কোনো অভিযোগেরই গুরুত্ব নেই। সরকার যা বলে, বাস্তবে কিছুই করে না। বাজেট বাড়াতে হলে তদবির করতে হয়।’

সরকারি নথিতে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও, বাস্তবে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেড সংকট, ওষুধের অভাব, চিকিৎসকদের অবহেলা—সব মিলিয়ে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। গরিব ও সাধারণ মানুষদের জন্য বরাদ্দ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কার্যত তাদের জন্য অপ্রাপ্তির শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারাবাংলা/এইচআই

চিকিৎসা সেবা নীলফামারী নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে বাড়েনি সেবার পরিধি সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর