চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান।
রোববার (২৩ মার্চ) দুপুরে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের জন্য পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের সমর্থন ও সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ নির্দিষ্ট কৌশল ও পরিকল্পনা প্রকাশ করা। আওয়ামী পরিচয়ে কোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা চলতে দেওয়া যাবে না। ’
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছদ্মবেশী ভারতীয় দালালদের কারণে শাপলা চত্বরের গণহত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন ও চব্বিশের গণহত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘প্রতিটি গণহত্যার ঘটনায় আরও গভীর অনুসন্ধান ও তদন্তের মধ্য দিয়ে পূর্ণ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যে বা যারাই এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তারা দেশের জনগণ ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মতভেদ তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমরা মনে করি, কোনো একক গোষ্ঠী বা ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছার ওপর এটি নির্ভর করার সুযোগ নেই। বরং পর্যাপ্ত রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার, জাতীয় ঐকমত্য ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত চাহিদার ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচন হতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রকে পুরনো ফ্যাসিস্ট কাঠামো ও দাসত্বের শৃঙ্খলে আমরা ফিরে যেতে দেব না ইনশাআল্লাহ।’
রাষ্ট্রসংস্কারের বিষয়ে তারা বলেন, ‘দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণের ঈমান আকীদা, ধর্ম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সভ্যতা অটুট রেখে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার করতে হবে। পাশ্চাত্য ও হিন্দুত্ববাদী চেতনানির্ভর ভোগবাদী দর্শন কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। সব রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে, আলেম ওলামা ও তৌহিদি জনতার সমর্থন ছাড়া কারো পক্ষে বৈধ পন্থায় ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকা সম্ভব হবে না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কারের তাগিদ দিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘গত ছয় মাসের পর্যবেক্ষণে আমাদের মনে হয়েছে, এ মুহুর্তে রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কারও আবশ্যক হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ উপদেষ্টার অদক্ষতা ও ব্যর্থতা ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। অনেকের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের চেতনাও অনুপস্থিত।’
‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে কাজ না করে কেউ কেউ হঠাৎ পেয়ে যাওয়া চেয়ার নিছক উপভোগ করছেন। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা ভর করেছে। ফলে বর্তমান বহুমুখী সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থদের বাদ দিয়ে চৌকস ও বিপ্লবী মানসিকতার ব্যক্তিবর্গকে উপদেষ্টা পরিষদে নিয়োগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আমরা জোর আহ্বান জানাই।’
হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে দায়ের হওয়া সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জানান হেফাজত নেতারা।