উত্তরের ঈদযাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ‘স্বস্তির’ আশ্বাস
২৪ মার্চ ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ০২:৪৯
টাঙ্গাইল: চাঁদের হিসাবে ঈদের আর বাকি এক সপ্তাহ। ছুটির আমেজও শুরু হয়ে যাবে দুয়েকদিনের মধ্যে। তখন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরের মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করবে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে তারা ফিরবে আপন নীড়ে।
প্রতিবছরই ঈদযাত্রা নিয়ে রাস্তায় থাকে জনভোগান্তি। সেই ভোগান্তি লাঘবে এবার একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেড। এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের মানুষ বিগত বছরের তুলনায় মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে স্বস্তি পাবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ।
তবে ঈদকে কেন্দ্র করে এই মহসড়কে ফিটনেসবিহীন বাস আর ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে না পারলে যানজটের শঙ্কা থেকেই যাবে। অপরদিকে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের ফোরলেনের কাজ শেষ না হওয়ায় এবারো যানজটের আশঙ্কায় রয়েছে এই মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করা যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। তবে যানজট মুক্ত ঈদযাত্রার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গসহ ২৩টি জেলার ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদ যাত্রায় তা বেড়ে হয় তিনগুণ। এ ছাড়াও, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চার লেনের সুবিধা শেষে এলেঙ্গায় এসে থেমে যাচ্ছে গাড়ির গতি। দুই লেনের যমুনা সেতুতে দুর্ঘটনা, সেতুর পূর্বপাড়ের গোলচত্বর থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে নানা অব্যস্থাপনা ও গাড়ির ধীরগতিতে হরহামেশাই এই স্বাভাবিক সময়ে তৈরি হচ্ছে যানজট।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলছে ৪ লেনের কাজ। ছবি: সারাবাংলা
জানা গেছে, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের কাজ শেষ হওয়ায় অনেকটাই ভোগান্তি লাগব হয়েছে। তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ফোর লেনের কাজ চলছে। যেকোনো উৎসবের আগে বা পরে রাজধানী থেকে উত্তরের এই পথে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ে অন্তত তিনগুণ। সেইসঙ্গে রাজধানী থেকে অনেক সময় ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর বাস ও ট্রাকসহ মালবাহী যানবাহনে ঈদে ঘরমুখী মানুষদের নিয়ে যাত্রা দেন উত্তরবঙ্গে। আর এইসব ফিটনেসবিহীন যানবহন সড়কের মাঝে বিকল হলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। এতে করে যানজটে আটকাপড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।
যাত্রীরা বলেন, মহাসড়কের অবৈধ অটোরিকশা ও তিন চাকার ভ্যান গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়াও, বর্তমানে ছিনতাই-চুরির সংখ্যা বেড়ে গেছে। মহাসড়কে রাতে যদি যানজট লেগে যায় তখন ছিনতাই ও চুরির শঙ্কা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই মহাসড়কে বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
উত্তরবঙ্গগামী শ্যামলী পরিবহণের বাসচালক সোহরাব মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহাসড়কে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। পুলিশ যদি মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঢুকতে না দেয় এবং তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তাহলে আমার মনে হয় যানজট হবে না।’
অন্যদিকে ট্রাক চালক বাছেদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ না হলে এবারও মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করছি। এই রাস্তার কারণে প্রতিবছরই আমাদের যানজটের কবলে পড়তে হয়।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গো থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তার ৪ লেনের কাজ চলছে। ছবি: সারাবাংলা
বিগত বছর জেলা পুলিশের তৎপরতায় অনেকটাই যানজট মুক্ত ঈদযাত্রা ছিল। গতবারের মতোই যমুনা সেতু এলাকা থেকে ভুঞাপুর রোডে যাত্রীবাহী বাস ও সেতু এলাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ওয়ানওয়ে করে দিয়ে যানবাহন উত্তরের পথে পারাপার করার হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ফোর লেনের রাস্তার কাজ চলমান থাকলেও এ বছর ১০ কিলোমিটার ফোর লেনের সুবিবা ভোগ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ফোর লেনের রাস্তার কাজ চলছে। এ জন্য শ্রমিকরা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। ঈদ উপলক্ষ্যে আগামী ২৪ মার্চ থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আশা করছি যানজট এড়াতে ৪ লেনের সুবিধা কিছুটা হলেও ভোগ করতে পারবে।’
যমুনা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে সেতু পার হতে পারে সে ব্যাপারে সেতু কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত। এবারের ঈদযাত্রায় যমুনা সেতুতে টোল আদায় সার্বক্ষণিক চালু থাকবে। তবে ভোগান্তি এড়াতে এবারে সেতুর দুই প্রান্তে টোল আদায়ের জন্য বাড়তি নয়টি করে বুথ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়াও, মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দু’টি বুথ থাকবে।’
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ঈদযাত্রার দুর্বলতা চিহ্নিত করে নানামুখী নতুন নেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক যানজট মুক্ত ও স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিতে সমন্বয় সভাও হয়েছে। এবার মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কে প্রায় সাত শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে শ্রমিক ফেডারেশন।’
উল্লেখ্য, ‘সাসেক সংযোগ প্রকল্প-২’ এর আওত্তায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মর্ডান মোড় পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। টাঙ্গাইল অংশে রয়েছে এলেঙ্গা থেকে সেতু পূর্ব পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২১ এর ডিসেম্বরে এই অংশের কার্যাদেশ পায় আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনও বেশির ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম
ঈদযাত্রা এলেঙ্গো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক যমুনা সেতু স্বস্তির আশ্বাস