মার্কিন সামরিক পরিকল্পনার গোপন চ্যাটে ভুলবসত যুক্ত হলেন সাংবাদিক
২৫ মার্চ ২০২৫ ১৪:৫৮ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ১৬:৩২
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের শীর্ষ সদস্যরা একটি গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার গোপন সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার সময় তারা ভুলবশত একজন সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গাবার্ড অন্তর্ভুক্ত, তারা সিগনাল নামে একটি বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপে চ্যাট গ্রুপ তৈরি করে এই সামরিক পরিকল্পনা আলোচনা করছিলেন। কিন্তু এই আলোচনায় ভুলবশত দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক জেফরি গোল্ডবার্গকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই ঘটনা সামনে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার এটিকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর সামরিক গোয়েন্দা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন এবং তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (২৪ মার্চ) দ্য আটলান্টিক-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গোল্ডবার্গ জানান, তিনি ‘Houthi PC Small Group’ নামে একটি চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হন এবং সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের ১৮ জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে দেখতে পান। চ্যাটের মধ্যে সেনাবাহিনীর অপারেশন সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য এবং একজন সিনিয়র সিআইএ কর্মকর্তার পরিচয়ও ছিল, যা গোল্ডবার্গ পরে মুছে ফেলেন।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ স্বীকার করেছেন, ‘এটি একটি বাস্তব মেসেজ চেইন বলে মনে হচ্ছে এবং আমরা পর্যালোচনা করছি কীভাবে এই ভুলটি ঘটেছে।’
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। আমি আটলান্টিকের ভক্ত নই।’
প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ দাবি করেছেন, ‘কেউ যুদ্ধ পরিকল্পনা পাঠাচ্ছিল না। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।’ তবে গোল্ডবার্গ পরে সিএনএন-এর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘না, এটি মিথ্যা। তিনি যুদ্ধ পরিকল্পনা পাঠাচ্ছিলেন।’
এই ঘটনার ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। সিগনাল একটি নিরাপদ চ্যাট অ্যাপ হলেও, এটি সরকারি সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করার জন্য অনুমোদিত নয়। মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা এটিকে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
চ্যাটের আলোচনায় দেখা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি আবারও ইউরোপকে সাহায্য করতে চাই না।’ এর উত্তরে হেগসেথ লিখেছেন, ‘আমি ইউরোপীয়দের ওপর নির্ভরশীলতা ঘৃণা করি। এটি লজ্জাজনক।’
জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক শেন হ্যারিস ব্লুস্কাইতে লিখেছেন, ‘২৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে এমন কেলেঙ্কারি আগে দেখিনি।’
এই চ্যাটের তথ্য ও ভাষা যাচাই করে গোল্ডবার্গ নিশ্চিত হন, এটি ভুয়া তথ্য নয়। এমনকি যখন আলোচনা চলছিল, তখনই ইয়েমেনে হামলা হচ্ছিল। এই ঘটনা ট্রাম্প প্রশাসনের গোপনীয়তা রক্ষার সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ওপর এর প্রভাব নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।
সারাবাংলা/এনজে