শুরু হচ্ছে ঈদযাত্রা, দূরপাল্লার বাসে ‘গলাকাটা’ ভাড়ার যন্ত্রণা
২৫ মার্চ ২০২৫ ১৯:৩২ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ২০:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদে সব মিলিয়ে টানা নয় দিনের ছুটি পাচ্ছেন কর্মজীবীরা। স্বাভাবিকভাবেই শুরু হতে যাচ্ছে কর্মস্থল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবার মিছিল। ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য পুলিশ নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু দূরপাল্লার বাস বরাবরের মতো বাড়তি ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে যাত্রীদের ‘গলাকাটা’র অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারছে না। ঈদযাত্রা শুরুর আগে বাসের টিকিট নিতে গিয়ে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে, এমন অভিযোগ যাত্রীদের।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে নগরীর অলংকার মোড়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়ে কয়েকটি বাস কাউন্টারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, অভিযানে যাত্রীদের থেকে প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ঈদযাত্রায় হয়রানির সঙ্গে ‘গলাকাটা’ ভাড়ার যন্ত্রনা সইতে হয় সাধারণ মানুষকে। বাস মালিকরা ঈদ আসলেই ভাড়া বাড়িয়ে দেন। উপায় খুঁজে না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে বাড়িতে যেতে হয় যাত্রীদের। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকটি বাস কাউন্টারে অভিযান চালায় অধিদফতরের একটি টিম। অভিযানে ভাড়া বেশি নেয়া ও ভাড়ার তালিকা না থাকায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদ ঘনিয়ে আসছে। ফলে চট্টগ্রামের বাস ও ট্রেন স্টেশনে বাড়বে ঘরমুখো মানুষের চাপ। এখনও কিন্তু চাপ শুরু হয়নি। তার আগেই বাস মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন। আমরা আজ (মঙ্গলবার) অভিযান চালিয়ে চারটি বাস কাউন্টার প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এরমধ্যে বলেশ্বর নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের কাউন্টার থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঝালকাঠির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছিল ১ হাজার ৮৫০ টাকায়।’
‘কিন্তু টিকিটের প্রকৃত মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকার মতো। ওই প্রতিষ্ঠানকে আমরা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। এছাড়া ভাড়ার মূল্যের তালিকা না থাকায় শ্যামলী, সোনিয়া ও তিশা প্লাটিনাম এন্টারপ্রাইজকে মোট ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে।’
এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের ছুটিতে মানুষ পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে যায়। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ায় সময় যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়, তাতে অনেকের আনন্দ যাত্রাপথেই মাটি হয়ে যায়। এবারও ঈদযাত্রা সেভাবে শুরু না হলেও বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা। দূরত্বভেদে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অসহায় যাত্রীদের এসব অনিয়ম মেনে নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে ঝালকাঠির নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন মো. সালাউদ্দিন। এর আগেও তিনি বলেশ্বর পরিবহনের বাসে ১ হাজার ২০০ টাকা ভাড়ায় চট্টগ্রাম থেকে ঝালকাঠি গেলেও মঙ্গলবার তিনি কাউন্টার এসে দেখতে পান সে ভাড়া হয়ে গেছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা। সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে থেকেই তারা ভাড়া বাড়িয়ে নেন। কখনও কখনো ডাবল ভাড়া নেন। ঝালকাঠির ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা। সেটা ১ হাজার ৮০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও তাদের দৌরাত্ম্য কমে না। ঈদ যত সামনে আসবে তাদের ভাড়ার পরিমাণ আরও বাড়বে।’
জানতে চাইলে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সব বাস মালিককে চিঠি দিয়ে বলে দিয়েছি যাতে কেউ বাড়তি ভাড়া না নেয়। ভাড়ার চার্ট রাখতে বলেছি কাউন্টারগুলোতে। আমার জানামতে, সব কাউন্টারেই ভাড়ার চার্ট আছে এবং কেউ ভাড়া বেশি নিচ্ছে না। যারা নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। সোমবার (২৪ মার্চ) আমরা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমরা বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যারা ভাড়া বেশি নেবে তাদের বিরুদ্ধে যাতে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) মাহমুদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঘরে যেতে পারেন সেজন্য পুলিশ তার নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ভাড়া বাড়তি নেয়ার বিষয়ে আমরা বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসেছি। এবার যাতে এরকম কিছু না হয় সেজন্য তাদের বিষয়টি নিয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সারাবাংলা/আইসি/এনজে