ড. ইউনূসের বেইজিং সফর, জিডিআই স্বাক্ষর নিয়ে ঢাকার ভাবনা
২৫ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৭ | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫ ২২:০৭
ঢাকা: বিশেষ বিমানে করে বিশেষ নিরাপত্তায় আগামী ২৬ মার্চ চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর ৫ আগস্টের পর দুই দেশের সরকারের প্রধানের এটি হতে যাচ্ছে প্রথম বৈঠক।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে আগামী শুক্রবার (২৮ মার্চ) দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। ওই বৈঠকে জিডিআই প্রসঙ্গ তুলতে পারে বেইজিং। তবে প্রধান উপদেষ্টার সফরে জিডিআই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই না হওয়ার কথাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে প্রায় ১৫টির মতো সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে চীন, যার মধ্যে জিডিআই ছিল। কিন্তু এখনই এ সমঝোতা স্মারক সই করবে না বলে বেইজিংকে জানানো হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যে ইতিবাচক সেটিও তাদের জানানো হয়েছে। সেজন্য এ সফরে জিডিআই নিয়ে আগের অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও নতুনত্ব চায় বেইজিং। ফলে এবার জিডিআইয়ের প্রশংসাসূচক ‘ভাষাগত’ কিছু পরিবর্তন আনতে রাজি হয়েছে ঢাকা। অর্থাৎ চীনকে আশ্বস্ত করা হবে আমরা আপনাদের এই উদ্যোগ ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।
কুটনীতিকরা বলছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিংপিং ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগের (জিডিআই) ঘোষণা দেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের ধারা নিশ্চিত করতে হলে বিশ্বকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি চীনের একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা। যেখানে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে যুক্ত করতে চায়। এখন পর্যন্ত চীনের এ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে ৬০টিরও বেশি দেশ।’
ঢাকার একজন কূটনীতিক বলেন, “জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সফরে এ সংক্রান্ত কোনো সমঝোতা হবে বলে মনে হয় না। তবে আমরা ভাষাগত একটু পরিবর্তন আনব। এ ব্যাপারে আমরা ক্রমাগত ভারসাম্যসূচক ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করে আসছিলাম, সেখানে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। এবার হয়তো প্রশংসা করব এই উদ্যোগের; এ রকম কিছু একটা থাকতে পারে। তবে ঠিক কোন শব্দ যুক্ত করা হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মূল কথা হলো, আমরা একটা বেটার ল্যাঙ্গুয়েজ দেব, আগের অবস্থান থেকে একটু বের হব।”
জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “জিডিআইয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।” তবে এতে যুক্ত হতে আপত্তির কিছু দেখছেন না বলে জানান তিনি।
চীনে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, “জিডিআই নিয়ে বাংলাদেশ একটু ধীরে চলো নীতিতে চলছে। হয়ত আমরা চট করে যেতে চাই না। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যুক্ত আছি, এটা তো জিডিআইয়ের বাইরে না। জিডিআইয়ে হয়ত আমরা এমনি যুক্ত থাকব, কিন্তু কোনো চুক্তি বা এমওইউ করব না। জিডিআইয়ে আমাদের যেতে বাধা দেখছি না। হয়ত চীনের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভে (জিএসআই) আমরা যাব না।”
২০২২ সালের আগস্টে ঢাকা সফর করেছিলেন চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উ-ই। সেই সফরে চীনের প্রেসিডেন্টের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) ও গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই)-এর মতো উদ্যোগে বাংলাদেশকে যুক্ত হতে প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে ছিল। তবে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আসার চেষ্টা করে বেইজিং। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদল হয়। সবমিলিয়ে বেইজিংয়ের আগ্রহের সঙ্গে কিছুটা হলেও তাল মেলায় ঢাকা।
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে তিনি প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে বেইজিং যান। তার সফরটি বেশ সফল হিসেবে দেখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বেইজিং সফরে চীন আবারও জিডিআই প্রসঙ্গ তোলে। ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় প্রধান উপদেষ্টার সফরের জন্য প্রস্তাবিত সমঝোতা স্মারকের মধ্যে জিডিআইও রাখে চীন।
সারাবাংলা/ইউজে/এসআর