ছায়ানটে ফুলেল শ্রদ্ধায় সনজীদা খাতুনকে বিদায়
২৬ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৩ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ২২:১৭
ঢাকা: ছায়ানটই যেন ছিলো তার প্রাণ। নিজের সেই প্রাণ প্রাঙ্গণে আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে নেওয়া হয় সনজীদা খাতুনের নিথর দেহ। তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে ছায়ানটে হাজির হন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। সেখানে অশ্রুসিক্ত চোখে ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত করে ভক্তরা।
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সর্বশেষ সভাপতি সন্জীদা খাতুনকে শেষবারের মতো দেখতে সকাল থেকেই ছায়ানট ভবনে আসতে শুরু করেন সঙ্গীতপ্রেমীসহ নানা অঙ্গনের মানুষ। এ সময় রবীন্দ্র সংগীত ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। একে একে প্রত্যেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পাশাপাশি চলতে থাকে সংগীত পরিবেশন।
ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, বাঙালি সংস্কৃতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন সনজীদা খাতুন। এই সমাজে যা ঘটছে, যে অরাজকতা চলছে, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকতেন তিনি। সব সময় বলতেন, ‘আমরা যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছি, তা কী পারছি?’ দেশের অরাজকতা নিয়ে তিনি সব সময় দুশ্চিন্তা করতেন। এ কথা সত্যি যে, একটা যুগের অবসান হলো।
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সময়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল মানুষ ছিলেন সনজীদা খাতুন। তিনি সব সময় তাঁর আদর্শে অটুট ছিলেন। বিন্দুমাত্র আপস তিনি করেন নি।’
শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে আরও শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা, শিবলি মহম্মদ, শামীম আরা নীপা, মিনু হক, চন্দনা মজুমদার, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, নায়লা আজাদ নুপুর, ম হামিদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, মফিদুল হক, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, অদিতি মহসিন, ঝুনা চৌধুরী, প্রমুখ।
জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ, কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়, কহন বাচিক, সুরের ধারা, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, বাংলা একাডেমিসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ এবং জাতীয় সংগীত সবাই মিলে গাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় ছায়ানটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান।
শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে বিএসএমএমইউতে হিমঘরে রাখা হবে। তবে এর পরের কার্যক্রম নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।
ছায়ানটের সহ-সভাপতি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের যে আয়োজন বিশাল আয়োজনে রূপ নিল, এর পেছনে কাজ করেছেন সন্জীদা খাতুন। ছায়ানটের সঙ্গে সমাজের মেলবন্ধন করেছেন। বহু মানুষের অন্তরে তিনি জেগে আছেন।’
প্রসঙ্গত, বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি সন্জীদা খাতুন মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯১।
তিনি একাধারে শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক, সংগীতজ্ঞ ও শিক্ষক হিসেবে তিনি নিজের দক্ষতার পরিচয় রেখে গেছেন।
ছায়ানটে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন ফাহমিদা খাতুন, রামেন্দু মজুমদার, খুরশীদ আলম, শাহীন সামাদ, সেলিনা মালেক চৌধুরী, ইফফাত আরা দেওয়ান, মিনু হক, খায়রুল আনাম শাকিল, শামীম আরা নীপা, শিবলী মহম্মদসহ আরও অনেকে।
সংগঠনের মধ্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছে সুরের ধারা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা থিয়েটার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, কণ্ঠশীলনসহ আরও কয়েকটি সংগঠন।
সারাবাংলা/এফএন/আরএস