Monday 31 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঈদ মার্কেট
ভারতের মাধুরী-কারিনার জায়গা দখল পাকিস্তানের গারারা-সারারা’র

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৬ মার্চ ২০২৫ ২২:১৫

ভারতীয় পোশাকের জায়গা দখল করেছে পাকিস্তানি পোশাক। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর পরই দেখা মিলবে শাওয়ালের চাঁদের। নতুন চাঁদ মানেই ঈদুল ফিতর, অর্থাৎ ঈদ উৎসব। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। যে উৎসব ঘিরে জমে ওঠে দেশের শপিংমলগুলো। নতুন নতুন পোশাকের ভিড়ে নিজেদের পছন্দের পোশাকটি খুঁজে নেয় উৎসবপ্রেমিরা।

সরেজমিনের দেখা গেছে, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই শপিংমলগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটার ভিড়। ফুটপাতসহ অভিজাত মার্কেটগুলোতে এমন চিত্র চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা সমাগম থাকছে দোকানগুলোতে। ফলে ক্রেতাদের সামাল দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। বিশেষ করে পুরুষ ক্রেতার চেয়ে নারী ক্রেতার সমাগম চোখে পড়ার মতো। তারা পছন্দের পোশাক কিনতে ঘুরছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে।

বিজ্ঞাপন

একটা সময় ছিল গাউসিয়া, নিউমার্কেট, মৌচাকসহ বিভিন্ন মার্কেটে দেখা যেতো নানা নামের বাহারী সব ভারতীয় পোশাক। যেমন- মাধুরী ড্রেস, কারিনা ড্রেস, পাখি, কিরনমালা, ময়ুরপঙ্খী কিংবা আনারকলি। প্রায় সব পোশাকের নামই ভারতীয় কোনো সিনেমা, সিরিয়াল অথবা অভিনেত্রীর নাম থেকে নেওয়া। কিন্তু এবারের ঈদ কেনাকাটায় ভারতীয় সেই দৌরাত্ম্য নেই। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে পাকিস্তানি বাহারী নাম। আর কাপড়ের মধ্যে এসেছে চীন থেকে আসা পণ্য।

রাজধানীর গাউসিয়া মার্কেটের দোতলায় নারীদের থ্রি-পিসের শোরুমগুলোতে দেখা যায়, সেখানে পাকিস্তানি রেশমী, গারারা, সারারা, পাঞ্চাব ও ফারসি ড্রেস। এগুলোর দাম দুই হাজার থেকে শুরু করে আট হাজার টাকার মধ্যে। নারীদের পছন্দের তালিকাতেও দেখা গেলো পাকিস্তানি গারারা।

নারীদের পছন্দের তালিকাতেও দেখা গেলো পাকিস্তানি গারারা। ছবি: সারাবাংলা

নারীদের পছন্দের তালিকাতেও দেখা গেলো পাকিস্তানি গারারা। ছবি: সারাবাংলা

থ্রি পিস ব্যবসায়ী নুরু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার আমাদের বেশিরভাগ পোশাক এসেছে পাকিস্তানি থেকে। ডিজাইনে আছে কোটিসহ জামা। এর মধ্যে বেশি চলছে কোটি পাঞ্জাবি, কোটি কাবলি কামিজ। এ ছাড়াও, পাকিস্তানি রেশমি ও ঘারারা আছে। কোনোটায় চুমকি পুঁতির গর্জিয়াস কারুকার্য। আবার সিম্পল কাপড়ের মধ্যেও ডিজাইন করা আছে। কেউ ঈদ দেখে গর্জিয়াসটা কিনছে, কেউ আবার গরমের জন্য সিম্পলের মধ্যে হালকা কাজ খুঁজছে। এর সবই আমাদের কালেকশনে আছে। যে যেটা পছন্দ করছে, দামে মিললে কিনে নিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

আরেক ব্যবসায়ী জব্বার আহমেদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ইন্ডিয়ান পোশাক আনতে পারি নাই। তাছাড়া হাসিনা পতনের পর মোদিরে সবাই দেখতে পায় না। এ জন্য ইন্ডিয়ান মাল কেউ নিবে না। এজন্য পাকিস্তানি জামা বেশি। তবে ইন্ডিয়ান পুরান কিছু মাল আছে, গতবছরেরগুলো। অনেকে কম দামের মধ্যে এগুলো কিনছে।’

মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে দাম নিয়ে বাকবিতণ্ডা। দামাদামি করে যে জিতছেন সে কিনছেন। ধানমন্ডি থেকে কেনাকাটা করতে আসা নাবিলা মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন বোন। প্রতি ঈদে আমরা একইরকম পোশাক কিনি, শুধু রং থাকে ভিন্ন থাকে। এবার নতুন ডিজাইনের মধ্যে পাকিস্তানি কালেকশনগুলোই নজরে আসছে। নতুন ডিজাইন বলতে, আজ থেকে ১৫-১৭ বছর আগেও এই ডিজাইনের পোশাক আমরা পড়েছি। কিন্তু এরপর মার্কেটে মেয়েদের জন্য এমন কটি পাঞ্চাবি ও শর্ট কামিজ দেখা যায়নি। হয়তো পাকিস্তানি পণ্যগুলো সেভাবে আসত না, তাই। এখন সেই ১৫/১৭ বছর আগের ডিজাইনগুলোই ভিন্ন মাত্রায় আধুনিক কারুকার্যে মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে। দেখে ভালো লাগছে। বেশকিছু ড্রেসই পছন্দ হয়েছে। এর মধ্য থেকে সাধ্য অনুযায়ী পোশাক কিনে ফেলব।’

এবারের ঈদ কেনাকাটায় ভারতীয় পোশাকের দৌরাত্ম্য কম। ছবি: সারাবাংলা

এবারের ঈদ কেনাকাটায় ভারতীয় পোশাকের দৌরাত্ম্য কম। ছবি: সারাবাংলা

তবে দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। আগের থেকে এবার দাম বেশি বলে জানালেন ক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, লাভ হচ্ছে না। ব্যবসায়ী হাসিম শেখ সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমরা এমনিতেই লসে আছি। ভারত থেকে নতুন মাল আনতে পারি নাই। দাম আমরা একটু বেশিই বলছি। যেহেতু ঈদের সিজন। কিন্তু কাস্টমাররাও টাকা বের করতে চান না। আমরা ছয় হাজার দাম বলতেেই তারা বলছে দেড় হাজার। আমরা ২০০/৩০০ লাভে দিয়ে দিচ্ছি। খুব একটা লাভ হচ্ছে না।’

শপিং মলগুলো ঘুড়ে দেখা যায়, পাকিস্তানি ছাড়াও চীন ও থাইল্যান্ডের কাপড়ের পোশাকের পসরাও রয়েছে মার্কেটে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, চীন থেকে আসা লং গাউনগুলো নারীরা পছন্দ করছেন। আবার চীনের কাপড় দিয়ে দেশে বানানো পোশাকগুলোও বেশ বিক্রি হচ্ছে।

দেশীয় পোশাক পছন্দ করেন এমন ক্রেতারও অভাব নেই। তাই বুটিক, হ্যান্ড প্রিন্ট, বাটিকের মধ্যে দেশজ নতুন ডিজাইনের পোশাকও কিনছেন বাঙালিরা। পোশাক যে দেশেরই হোক না কেনো, ঈদ সবার জন্য। সবাই যার যার পছন্দের পোশাক পরে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবেন, পালন করবেন ঈদ উৎসব- এটাই বড় কথা।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

গারারা-সারারা জায়গা দখল পাকিস্তান ভারত মাধুরী-কারিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর