২৭ মার্চ ১৯৭১
শেখ মুজিবের পক্ষে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা
২৭ মার্চ ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ০৩:২১
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ। এদিন সকালেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে এনে রমনা কালীমন্দিরে ২৭ জনকে হত্যা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ধারণা করা হয়, সেখানকার শহিদদের বেশিরভাগই বাঙালি ইপিআর সদস্য। তবে এই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন শিথিল করে সামরিক কর্তৃপক্ষ। তখন অসংখ্য মানুষ হাতের কাছে যা পায় তাই নিয়ে রিকশায় বা পায়ে হেঁটে ঢাকা শহর ছেড়ে যেতে থাকে।
এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেন। সেইসঙ্গে বাঙালিদের আশ্রয় দিতে সীমান্ত খুলে দেয় ভারত। আকাশবাণীতে সীমান্ত খুলে দেওয়ার খবর জানার পর জনস্রোত ধাবিত হয় সীমান্ত অভিমুখে। ঢাকায় টানা ৩৪ ঘণ্টার হত্যাকাণ্ড শেষে করে এদিন পাকিস্তানের সেনারা ব্যারাকে ফেরে। পাকিস্তানের কোনো খবরে বাংলাদেশের ওপর এই বর্বরতার কথা প্রকাশ হয়নি। আর ঢাকায় কোনো পত্রিকাই প্রকাশিত হয়নি। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করে নেওয়ার পর বাঙালি শ্রমিকদের হত্যা করা হয়।
২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম (পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) ইংরেজিতে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চের মতো এই দিন দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানে দু’বার স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি ২৭ মার্চ প্রথমবার স্বাধীনতার যে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, তার মূল কপিটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার শেখ মুজিবের নামে যে স্বাধীনতার ঘোষণাটি তিনি পাঠ করেন, সেটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র-এর তৃতীয় খণ্ডে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
অপরদিকে সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশে ঢাকায় আসা প্রায় ৫০ জন বিদেশি সাংবাদিক ২৫ মার্চ রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আটক ছিলেন। ২৭ মার্চ কড়া সেনা পাহারায় তাদের হোটেল থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে নিয়ে বিশেষ বিমানে করাচি পাঠানো হয়। পরে জানা যায়, তখন দু’জন সাংবাদিক পাকিস্তানি সেনাদের চোখ এড়িয়ে হোটেলে লুকিয়ে ছিলেন। তাদের একজন সাইমন ড্রিং। কারফিউ শিথিল হলে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হন। পরে তাদের পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
২৭ মার্চ বিবিসির খবরে বলা হয়, ‘কলকাতা থেকে প্রচারিত সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ যে, পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক গুপ্ত বেতার থেকে জনসাধারণের কাছে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।’ ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, ‘ঢাকায় পাকিস্তান বাহিনী আক্রমণ শুরু করেছে। মুজিবুর রহমান একটি বার্তা পাঠিয়েছেন এবং সারা বিশ্বের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।’
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম