মিয়ানমারে ভূমিকম্প: নিহত বেড়ে ৬৯৪
২৯ মার্চ ২০২৫ ১০:২৩ | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৭
মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে এ পর্যন্ত ৬৯৪ জন নিহত ও ১ হাজার ৬৭০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার (জান্তা)।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুরে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের কাছে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এতে রাজধানী নেপিদোসহ বিভিন্ন শহরে বহু ভবন ধসে পড়ে, সেতু ভেঙে যায় এবং হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ভূমিকম্পের পর একাধিক আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল ৬ দশমিক ৪ মাত্রার। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভূমিকম্পের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়ে, যেখানে অনেক ভবন সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ মঠ, সরকারি ভবন ও আবাসিক ভবনগুলোর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। রাজধানী নেপিদোতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্মিত একাধিক ভবন ধসে পড়েছে, যেখান থেকে উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মিয়ানমারের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ জানিয়েছে, পাঁচটি শহরে ভবন ধসের ঘটনা ঘটেছে এবং দুটি সেতু ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়-ইয়াঙ্গুন মহাসড়কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধসে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ফেটে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের প্রভাব প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও চীনেও অনুভূত হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৩৩ তলা নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে পড়ে, এতে ৬ জন নিহত, ২২ জন আহত ও ১০১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ব্যাংকক গভর্নর চাদচার্ট সিত্তিপান্ত জানিয়েছেন, ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান চলছে।
চীনের ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে। চীনের সীমান্তবর্তী শহর রুইলিতে অনেক ভবন ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে, তবে এখনো হতাহতের পূর্ণ তথ্য জানা যায়নি।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা পাঠাচ্ছে। চীন একটি ৩৭ সদস্যের উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে, যাদের সাথে রয়েছে ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ যন্ত্র, ড্রোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম।
রাশিয়া তাদের জরুরি বিভাগ থেকে দুইটি বিমানে করে ১২০ জন উদ্ধারকারী ও প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে।
জাতিসংঘ প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে এবং বিভিন্ন সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তবে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি ও ত্রাণ সহায়তায় সাম্প্রতিক কাটছাঁটের কারণে সাহায্য কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রক্তের সংকট দেখা দিয়েছে এবং স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে রয়েছে। ভূমিকম্পের পর জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ‘মিয়ানমার যেকোনো ধরনের আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করতে প্রস্তুত’। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য নিতে গড়িমসি করতে পারে।
এদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই দুর্যোগ জান্তার জন্য একটি বড় পরীক্ষা, কারণ সাম্প্রতিক সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে।
বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় এবং কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র পেতে সময়ের প্রয়োজন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/এনজে