বড়লেখার ২ যুবককে ভারতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ, গ্রেফতার ১
৭ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৯ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০১
সিলেট: কাজের কথা বলে মৌলভীবাজারের বড়লেখার দুই যুবককে ভারত পাচার করে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আরেকজন যুবক পাচারকারীদের কবল থেকে কৌশলে ফিরে এসে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। পরে মানবপাচার আইনে বড়লেখা থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিন এলাকায় গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, সীমান্ত দিয়ে মহিষ চোরাচালানের দ্বন্দ্বে ওই যুবকদের ভারতে পাঠিয়ে সেখানে নির্যাতন চালানো হয়। ওই যুবকরা এখন ভারতে স্থানীয় প্রশাসনের হেফাজতে আছেন।
পাচারের শিকার যুবকরা হলেন— বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল কাদির (২৩) ও একই ইউনিয়নের পূর্ব সাতকরাকান্দি গ্রামের আব্দুল শুক্কুরের ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)।
পাচারকারীদের কবল থেকে ফিরে আসা যুবকের নাম শাহিন আহমদ (১৮)। শাহিন বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে।
এ ঘটনায় পাচারের শিকার যুবক আব্দুল কাদিরের মা নেছা বেগম বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মানব পাচার আইনে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৮ জনকে।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন— বড়লেখা সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামের সরফ উদ্দিন নবাব (৪০), একই ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের ফখর উদ্দিন (৩৮), আব্দুল খালিক (৪০), কুটু মিয়া (৩৮), আদুল শুকুর (৪০), খয়রুল ইসলাম (৩৯), আব্দুল মালিক (৩৬), কেছরিগুল গ্রামের ইছহাক আলী (৪২), ডিমাই গ্রামের ইমাম উদ্দিন (৪০) ও গৌরনগর গ্রামের রুবেল আহমদ (৩৫)।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাচারের ঘটনায় জড়িত আব্দুল মালিক (৩৬) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। আব্দুল মালিক বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই গ্রামের ইছহাক আলীর ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা ডিমাই গ্রামের তাজ উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুল কাদিরের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা কাজ আছে জানিয়ে গভীর রাতে আব্দুল কাদির ও তার প্রতিবেশী শাহিন আহমদকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। একই গ্রুপ (আসামিরা) গিয়াস উদ্দিন নামের আরও এক যুবককে তার বাড়ি থেকে ডেকে নেয়।
শনিবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে শাহিন আহমদ কৌশলে আহত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে এসে স্বজনদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়। শাহিন জানায়, আসামিরা আব্দুল কাদির ও গিয়াস উদ্দিনকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের অবৈধভাবে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। এ সময় শাহিন আহমদ আসামিদের কবল হতে কৌশলে পালিয়ে আসে। এর আগে শাহিনের উপর নির্যাতন চালানো হয়। আহত শাহিনকে তার স্বজনরা বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন।
মামলার বাদী নেছা বেগম বলেন, শাহিন ফিরে এসে তাদের ওপর চালানো নির্যাতনের খবর জানায়। এরমধ্যে আমার ছেলে কাদির ও গিয়াসের ওপর ভারতে নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখতে পাই। এরপর আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের (আসামিদের) কাছে অনেক আকুতি-মিনতি করি। কিন্তু আসামিরা আমার নিকট ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে তারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় মানব পাচার আইনে থানায় মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে।’
সারাবাংলা/এইচআই