গাজাবাসীদের স্থানান্তর ও শুল্ক ইস্যুতে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর বৈঠক
৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৬ | আপডেট: ৮ এপ্রিল ২০২৫ ১১:২৯
হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সোমবার (৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি ছিল ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ, যেখানে গাজা পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির বিষয়ে আলোচনা হয়।
রোববার (৬ এপ্রিল) হঠাৎ করে এই সফরের ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। তিনি জানান, গাজার জিম্মিদের মুক্তি এবং নতুন মার্কিন শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতেই তাঁর এই সফর। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন নতুন শুল্ক ঘোষণা করে, যার মধ্যে ইসরায়েলি পণ্যের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক অন্তর্ভুক্ত।
নেতানিয়াহুর সফর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন নিজ দেশে তিনি যুদ্ধবিরতিতে ফেরার এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরানোর সাহসী পরিকল্পনা এবং নতুন একটি জিম্মিমুক্তি চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ‘আমরা এখন আরেকটি চুক্তির ওপর কাজ করছি, যেটি সফল হবে বলে আশা করি।’ নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘গাজার মানুষ যেন স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, আমরা সেই সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গত সপ্তাহে তিনি গাজার কিছু অংশ দখল করে সেখানে নিরাপত্তা করিডোর তৈরির পরিকল্পনার কথা বলেন, যা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অঞ্চলটির ওপর ইসরায়েলের স্থায়ী নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরে ট্রাম্প গাজা দখল করে সেখানকার দুই মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। এরপর থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় হামলা শুরু করে, যা আমেরিকা, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেয়।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, নতুন ইসরায়েলি হামলায় আরও প্রায় ১ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যা যুদ্ধের শুরু থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি ইসরায়েল গাজায় সব খাদ্য, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে কি না, সে বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছু স্পষ্ট করেননি। ট্রাম্প বলেন, ‘ভুলে যাবেন না, আমরা ইসরায়েলকে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিই। এটা অনেক বড় অঙ্ক।’
ট্রাম্প আরও জানান, তিনি ৯০ দিনের জন্য শুল্ক বাস্তবায়নে বিরতি দেওয়ার খবর অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে। আমরা ন্যায্য চুক্তিই চাই।’
নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউজ বৈঠকের আগে তিনি মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইসরায়েলি সরকার এই বৈঠককে উষ্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেছে।
ওয়াশিংটনে আসার আগে নেতানিয়াহু চার দিনের সফরে হাঙ্গেরিতে ছিলেন। এটি ছিল গাজার যুদ্ধাপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তার প্রথম ইউরোপ সফর। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান জানিয়েছেন, তিনি আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আইসিসি-কে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে দেশটিকে আদালত থেকে বের করে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়।
সারাবাংলা/এনজে