ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম।
আজহারুল ইসলাম বলেন, সকলকে সঙ্গে নিয়ে এবারের শোভাযাত্রা আনন্দময় হবে। এবারের আয়োজনে ২৮ জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মধ্য শোভাযাত্রাটি ‘সকলের হয়ে উঠবে’ বলে মনে করছেন আয়োজন সংশ্লিষ্টরা।
চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বারের মত এ বছর পুলিশ ফোর্স শোভাযাত্রার একদম সামনে থাকবে না। পুলিশ বা র্যাব সবসময় এমন ভাবে সামনে থাকতো দেখে মনে হতো এই শোভাযাত্রাটি র্যাব বা পুলিশের।কিন্তু এই শোভাযাত্রা প্রতিটা বাঙালির। তাই এবারে সামনে থাকবেন সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। থাকবে আমাদের বাউল সংগীতশিল্পীরা এবং ব্যান্ড সংগীত তারকারা। সেই সঙ্গে সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্তি মানুষরা সামনে থাকবেন। আর থাকবে চারুকলার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।’
তিনি জানান, এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এবারের সবচেয়ে বড় প্রতীকটা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট এর মুখের আকৃতি এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থানের নিহত মুগ্ধের পানির বোতল।
আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, শোভাযাত্রার মোটিফের মধ্যে স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি, বড় আকৃতির একটি ইলিশ মাছ, সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পীদের কাঠের বাঘ আর শান্তির পায়রার নির্মাণকাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন শিল্পীরা। বাঁশ-কাঠের কাজ প্রায় শেষ।
নাম পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গল শব্দটা সবার জন্যই। কিন্তু সেই শব্দটাকে একটা ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠী নির্দিষ্ট একটা অর্থে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু আমরা চাই মঙ্গল বা এই শোভাযাত্রা সবার হোক। ১৯৮৯ সালের এটার নাম ছিল ‘আনন্দ সোভাযাত্রা’। সেখান থেকে পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মঙ্গল সোভাযাত্রা’। আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটো মেসেজ (বার্তা) আছে। একটি হচ্ছে, একটি নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার অবসান। রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিফ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, সেটি হচ্ছে মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক।’
চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।