মেঘনা আলমের মুক্তি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল দাবি
১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৩ | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৩
ঢাকা: অবিলম্বে মেঘনা আলমের মুক্তি এবং ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনের সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৯ এপ্রিল বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী মেঘনা আলম নামক এক নাগরিকের বাসায় ঢুকে দরজা ভেঙে জোরপূর্বক তাকে আটক করে। একদিন সম্পূর্ণ নিখোঁজ রাখার পর ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে তাকে হাজির করা হয় এবং পুলিশ তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকের অনুরোধ জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন। এই ঘটনাটি বর্তমান বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা ও বিচারবিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরও রাষ্ট্রের এরূপ ‘আইনী’ স্বৈরাচারী তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’সহ নিপীড়নমূলক কোনো আইন থাকতে পারে না- উল্লেখ করে বলা হয়, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) একটি ফ্যাসিবাদী আইনের ধারা যার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়ীতে হামলা করে তুলে নিয়ে তাকে বৈধতা দেবার চেষ্টা হচ্ছে। গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিলো। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এরকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দেখেছি যে, মেঘনা আলমকে যখন পুলিশ পরিচয়ে কতিপয় সশস্ত্র ব্যক্তি দরজা ভেঙে আটক করতে অভিযান চালাচ্ছিল তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ ভিডিও করেন। ভিডিওতে তিনি ভাটারা থানা ও ৯৯৯ হটলাইনে সহায়তা চেয়ে পান নি। তিনি নিজে থানায় যাবার কথা বলেছেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং আটকের কারণ জানতে কাগজ চেয়েছেন। কিছুই মানা হয়নি। তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাবার পর পুরো একদিন তাকে গুম করে রাখা হয়। এ সময়ে ফেসবুকে তার লাইভ ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং পুলিশ ও ডিবি তাকে আটকের কথা অস্বীকার করে। ফেসবুকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হলে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে এই আটক স্বীকার করা হয়। এরপর অত্যন্ত অস্বচ্ছ বার্তা প্রেরণ করে জনগণকে জানানো হয় যে, ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার হুমকিস্বরূপ ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার কারণে’ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কুটনীতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ যে অভিযোগ দিয়েছে তা বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য। রাষ্ট্র যদি একজন কুটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং কূটনৈতিক প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন নতজানুতা প্রকাশ পায়।
যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে একজন নাগরিকের অধিকারকে হরণ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনার সাথে ওই বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও তদন্ত করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সারাবাংলা/আরএস
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মেঘনা আলম