‘উন্নয়নের আফিমে বুঁদ হয়ে আছে জাতি’
২৫ জুন ২০১৮ ১৫:৩৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের মেগা প্রকল্পের নামে স্বার্থান্বেষী একটি শ্রেণির স্বার্থ দেখছে সরকার। সেই সঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে এগিয়ে থাকতে জনগণের সামনে বড় বড় স্থাপনা দেখানো হচ্ছে। অথচ সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নয়নের আফিমে জাতিকে বুঁদ রেখে শাসক শ্রেণি তাদের আখের গোছাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
সোমবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘বাজেট সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের সহায়ক নয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের উপস্থাপনায় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অর্থনীতিবিদ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার রহমান এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে যে বাজেট প্রণয়ন করেছে তা কোনোভাবেই দেশের সাধারণ ও কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থ দেখবে না। এ বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের যে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন তা সরকারের নেই।
দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ধনী-দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে ব্যবধান অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বাজেট নিয়ে আগে দেশে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হতো, এখন সে অবস্থা নেই। সবকিছু একচেটিয়া। মনে হয় দেশে আইয়ুবীয় কিংবা এরশাদীয় শাসন চলছে। মানুষ প্রতিবাদের স্পৃহা হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু এটি মোটেই ভাল কিছু নয়। এসময় তিনি কৃষিখাতে ভর্তুকি আরো বাড়ানোর দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার রহমান বলেন, দেশের দশটি মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। অথচ এই মুহূর্তে সবগুলো প্রয়োজন নেই। এর চেয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন জরুরি। অথচ বাজেটে সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আরো কমেছে।
ব্যাংকিংখাতের ডাকাতির বিচার না করে বাজেটে এ খাতে সরকারি কোষাগার থেকে ভর্তুকি দেওয়ার উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এই উদ্যোগ গরীবকে শোষণ ও ধনী বা ডাকাত শ্রেণিকে তোষণের শামিল।
লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ডা. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে। অথচ সরকার যখন এ খাতে চাপ দেয় তখন তা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের ওপর গিয়ে পড়ে।
ব্যাংকিংখাতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ কিংবা এসব বড়বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির বিচার না করায় ছোটো আমনতকারীরাও আস্থাহীনতায় রয়েছে। ফলে ব্যাংকিংখাতও কঠিন সময় পার করছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, এই বাজেট এক কথায় গরীব মারার বাজেট। সরকার তার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে একটি ফাঁপা বেলুন জনগণের সামনে হাজির করেছে। কায়েমী স্বার্থবাদীদের জন্য এ বাজেট করায় সাধরণ মানুষ এ থেকে কিছুই পাবেনা । তিনি সাম্প্রতিক সময় গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর কঠোর সমালোচনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, বর্তমান সরকার ইনসেনসিবল সরকার। নির্বাচনে জিততে জনগণের টাকার অপচয় করছে। চীনারা যেভাবে সরকারকে বিভিন্ন প্রকল্প দিয়ে বুঁদ করে রেখেছে। সরকারও উন্নয়নের আফিম দিয়ে জাতিকে বুঁদ করে রেখেছে। অথচ জনগণের জীবন মানের অবনতি ঘটছে।
প্রতি বছর বাজেটের আগে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয় সরকার তার কোনোটিই আমলে নেয়না- উল্লেখ করে তিনি বলেন, অথচ সরকারের দাবি দেশের মালিক জনগণ। তাহলে কেন বাজেটে জনগণের দাবি উপেক্ষিত থাকে, কেন তাদের স্বার্থ রক্ষা হয় না প্রশ্ন করেন তিনি।
সারাবাংলা/এমএস/এমআইএস
আরও পড়ুন..
বাজেটে প্রত্যাশিত স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে: টিআইবি
`বাজেট তথ্যপ্রযুক্তি বান্ধব নয়’