সুদানে আধাসামরিক বাহিনীর বিকল্প সরকার গঠনের ঘোষণা
১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৯ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:০৮
সুদানের আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের কমান্ডার, জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো ‘হেমেদতি’। ছবি: সংগৃহীত
সুদানে চলমান দুই বছরের গৃহযুদ্ধের মধ্যে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটি বিকল্প সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এ সংঘাত ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।
আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেদতি নামে পরিচিত, বলেন, ‘আমরা সুদানের জন্য একমাত্র বাস্তবসম্মত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছি।’
এই ঘোষণার সময় লন্ডনে সংঘাতের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে এক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। সেখানে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি শান্তির একটি পথরেখা তৈরির আহ্বান জানান।
এদিকে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা উত্তর দারফুর শহর আল-ফাশারের বাইরে আরএসএফ ঘাঁটি বোমা হামলা করে ধ্বংস করেছে। এতে জামজাম শরণার্থী শিবিরের হাজার হাজার মানুষ পালাতে বাধ্য হয়েছে।
হেমেদতি এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের সরকার একটি আইনের শাসনভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তুলছে, যা ব্যক্তি শাসনের চেয়ে আলাদা। তিনি বলেন, ‘আমরা আধিপত্য চাই না, চাই ঐক্য। কোনো গোষ্ঠী, অঞ্চল বা ধর্ম সুদানি পরিচয়কে একচেটিয়া করতে পারে না।’
আরএসএফ-এর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ছাড়াও পুরো সুদানে শিক্ষাসেবা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ মৌলিক পরিষেবা প্রদানের অঙ্গীকার করেন তিনি।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, সম্প্রতি আরএসএফ পরিচালিত হামলায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ উভয়ই গণহত্যা ও যৌন সহিংসতাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে হেমেদতি এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে এবং ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।
সাম্প্রতিক সংঘাতে আল-ফাশার শহরের জামজাম শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে প্রায় ৭০ কিমি পথ পায়ে হেঁটে তাওইলা শহরে পৌঁছেছে হাজার হাজার মানুষ। মেডিকেল চ্যারিটি এমএসএফ জানিয়েছে, অনেকেই পানিশূন্যতায় ভুগছেন, শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ তৃষ্ণায় মারাও গেছে।
প্রায় ৭ লাখ মানুষের জন্য দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবিক সংস্থাগুলো। নিরাপত্তা হুমকি ও রাস্তায় বাধার কারণে ত্রাণ পৌঁছানো ব্যাহত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাজ্য অতিরিক্ত ১৫৯ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা ঘোষণা করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি বলেন, ‘অনেকেই সুদানকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছেন, এটা নৈতিকভাবে ভুল। আমরা যখন দেখি এত সাধারণ মানুষ শিরশ্ছেদ হচ্ছে, এক বছরের শিশু পর্যন্ত যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তখন আমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না।’
সম্মেলন থেকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন স্পষ্ট করেছে, তারা সেনাবাহিনী ও আরএসএফ-এর মধ্যে বিভক্ত সুদানকে মেনে নেবে না।
সারাবাংলা/এনজে