বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, সবজি চড়া হলেও মাছ-মাংস স্থিতিশীল
১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তিনমাস ধরে নাগালের মধ্যে থাকা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও চড়া। তবে মাছ, মাংস, মুদিপণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। বরং, ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দরদামের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে এখন দেশীয় হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজ থাকলেও চাহিদা বেশি নেই। পাইকারিতে সবধরনের পেঁয়াজের দাম পহেলা বৈশাখের পর কেজিতে ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে হালি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫৫ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৫২-৫৩ টাকা। আর দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ আড়তে তেমন নেই। যা আছে সেগুলো কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স বাচা মিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এতদিন দেশীয় মুড়িকাটা ও মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। সেগুলোর ফলন এবার ভালো হয়েছিল, দামও কম ছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। সেজন্য বিক্রি করে ফেলতে হয়েছে। মুড়িকাটা ও মেহেরপুরের পেঁয়াজের মজুত শেষ। এখন বাজারে এসেছে হালি পেঁয়াজ। এটার চাহিদা বেশি, আবার সংরক্ষণও করা যায়। অনেকে হালি পেঁয়াজ কিনে মজুত করছে, সেজন্য দাম বাড়ছে। ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আছে, কিন্তু সেগুলোর চাহিদা নেই।’

গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও চড়া। ছবি: সারাবাংলা
খুচরায়ও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশীয় পেঁয়াজের দাম অন্তত কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার খুচরায় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া, রসুনের দামও কিছুটা বেড়েছে। চায়না রসুন ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২২০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে ভারতীয় আদার দাম, যা প্রতিকেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে গ্রীষ্মকালীন সবজি মিলছে না। খুচরায় প্রতিকেজি বেগুন, তিতা করলা, পটল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, কচুর লতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। ঝিঙ্গা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা, পেঁপে, চালকুমড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোলের দাম একেক বাজারে একেকরকম দেখা গেছে। কাজির দেউড়ি বাজারে প্রতিকেজি কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। রিয়াজউদ্দিন বাজারে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। আবার রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাইকারি আড়তে সেই কাঁকরোল ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অবশ্য দামের স্বস্তি দিচ্ছে আলুসহ কয়েকটি সবজি। আলু প্রতিকেজি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২৫ টাকা, টমেটো ২৫ টাকা ও কাঁচাকলা জোড়া ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাজর ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতকালীন ফুলকপি-বাঁধাকপি কেজি ২০ টাকা, মূলা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে শাকের মধ্যে পুঁইশাক প্রতি আঁটি ৪৫ টাকা, লাউশাক, কলমিসহ বিভিন্ন ধরনের শাক ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবু আকারভেদে ১২০ থেকে ২২০ টাকা ও ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংস ও ডিমের দাম স্থিতিশীল আছে। ছবি: সারাবাংলা
মুদিপণ্যের মধ্যে আটার দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি খোলা আটা গত সপ্তাহে ৩৮ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ২ থেকে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। আর প্যাকেট আটা ২ কেজি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ময়দা কেজিপ্রতি খোলা ৬০ টাকা ও প্যাকেট দুইকেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া, ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, মাষকলাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে সরকার নির্ধারিত দরে এক লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা, বোতলের পাঁচ লিটার ৯২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, লিটারে ১২ টাকা বেড়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও খোলা পাম তেল ১৬৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল খোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯০ টাকায়। বোতলের সরিষার তেল তেলের কেজি ৩৬০ টাকা।
চালের দর আগের মতোই আছে। বাজারে ২৫ কেজির বস্তা নাজিরশাইল সিদ্ধ (মজুমদার ব্র্যান্ড) ২২০০ টাকা, ভারতীয় নাজিরশাইল (হোয়াইট গোল্ড) ২০৫০ টাকা, জিরাশাইল সিদ্ধ ৫০ কেজির বস্তা ৪২০০ থেকে ৪২৫০ টাকা, ২৫ কেজির বস্তা কাটারিভোগ আতপ ২১৫০ থেকে ২৩০০ টাকা এবং সাধারণ মানের পাইজাম আতপ ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কাটারিভোগ সিদ্ধ ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়।
মাংস ও ডিমের দাম স্থিতিশীল আছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা। কক মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকায়। ছবি: সারাবাংলা
এ ছাড়া, বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছের দামও অপরিবর্তিত আছে। মাছের মধ্যে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কাঁচকি ৬০০ টাকা, কৈ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রূপচাঁদা ৫৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম