রূপকথার রাজপুত্রের মতো বাংলাদেশের ফুটবলে তার আগমন। হামজা চৌধুরীর ছোঁয়ায় অল্প কদিনেই বদলে গেছে বাংলাদেশের ফুটবলের চালচিত্র। বাংলাদেশের হয়ে হামজার অভিষেক ম্যাচে দল পেয়েছে নতুন এক জার্সিও। আকর্ষণীয় এই জার্সি এরই মধ্যে নজর কেড়েছে সবার। হামজাদের এই নতুন জার্সির কারিগর ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্ট্রাইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসমিত আফিয়াত আর্নি। সারাবাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আর্নি জানিয়েছেন এই জার্সি তৈরির পেছনের গল্পটা, জানিয়েছেন হামজার আগমনে বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তার স্বপ্নের কথাগুলোও।
তাসমিত আফিয়াত আর্নি। বিশ্বের ফ্যাশন জগতে বাংলাদেশের অন্যতম বড় ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ তিনি। ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্ট্রাইডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অনেকদিন ধরেই সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ফ্যাশন জগতের চেনা মুখ হলেও আর্নি নতুন ভাবে আলোচনায় এসেছেন বাংলাদেশের ফুটবল দলের নতুন জার্সি ডিজাইন করে। তার কাছে তাই নতুন এই জার্সি, হামজার আগমন, বাংলাদেশের ফুটবল দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন সারাবাংলার স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট ফাহিম মাশরুর। নিচে সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
সারাবাংলা- বাংলাদেশের জার্সি তৈরির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- হঠাৎ করেই বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। শেষবার যখন বাংলাদেশে আসি, তখন আমার সঙ্গে বাফুফের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে বাফুফের মার্কেটিং টিমের ক্রিয়েটিভ দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় ব্যাপার ছিল। কারণ সব ক্ষেত্রেই আমরা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। ব্যক্তিগত একটা চাওয়া ছিল, আমাকে যেন বড় একটা ক্যানভাস দেওয়া হয় ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগটা থাকে।
সারাবাংলা- বাফুফে কি সেই সুযোগটা দিল?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- হ্যাঁ, তারা আমাকে সেই স্বাধীনতা শুরুতেই দিয়ে রেখেছে। তাবিথ আউয়াল ভাই ও ফাহাদ কারিম ভাই আমাকে জানালেন, নিজের মতো করে ডিজাইন করতে। তাদের শুধু একটাই চাওয়া ছিল। যেহেতু এই জার্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলকে পুরো বিশ্ব চিনবে, সেক্ষেত্রে জার্সির ক্যানভাসটা যেন বড় হয়। আমি জার্সি তৈরির সময় এটাই মাথায় রেখেছি।
সারাবাংলা- বাংলাদেশের নতুন জার্সি ডিজাইনের সময় কোন থিমটা আপনার মাথায় ছিল?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- জার্সিটা তৈরির সময় আমার মাথায় ছিল ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ থিম। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের আগের কোনো জার্সিতেই ডিজাইনের বেসিক নিয়মগুলো মানা হয়নি। বাংলাদেশের ফুটবল এখনো বিশ্বে সেভাবে জনপ্রিয় নয়। এমন কিছু তাই জার্সিতে দিতে চেয়েছিলাম, যা দেখেই পৃথিবীর সবাই বাংলাদেশকে চিনবে। সবাই আমাদের পতাকা ও মানচিত্র চেনে, এই থিমটাই আমি রাখতে চেয়েছি। সবাই যেন জার্সির এই থিমটা দেখেই আমাদের চিনতে পারে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদীর সেই ম্যাপটা আমি জার্সির বুক বরাবর রেখেছি। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলাকে ভেবে ‘ডায়মন্ড কাট’ শেপটা জার্সিতে রেখেছি। বাংলাদেশের ফুটবলাররা আমার কাছে তো আসলেও ‘হীরার টুকরা’! ছিল বাংলাদেশের ম্যাপ, ক্যালিগ্রাফিও।
সারাবাংলা- নতুন এই জার্সি উন্মোচনের পর সবার ফিডব্যাক কেমেন পেয়েছিলেন?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- ফিডব্যাক এক কথায় দারুণ ছিল! দেশে, দেশের বাইরে এমনকি বিভিন্ন দূতাবাস থেকেও আমি প্রশংসা শুনেছি। এটা সত্যিই দারুণ একটা ব্যাপার। সমর্থকরা এই জার্সি গায়ে জড়িয়ে এটার পেছনে গল্প নিয়ে ভাববে, এটাই আমার প্রত্যাশা। বাংলাদেশের জার্সি নিয়ে এখনো অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। সেগুলো নিয়েই ভবিষ্যতে আরও কাজের ইচ্ছা আছে।
সারাবাংলা- এবার হামজা চৌধুরী প্রসঙ্গে আসা যাক। হামজার এই আগমন দেশের ফুটবলকে কতোটা এগিয়ে দেবে বলে মনে করছেন?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- অবশ্যই এটা বাংলাদেশের ফুটবলকে অনেক এগিয়ে নেবে। সে বিশ্ব ফুটবলে পরিচিত একটা নাম। সে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে। খুবই মাটির মানুষ। বাংলাদেশের ছেলে হয়ে সে বিশ্ব ফুটবলে এত দারুণ খেলার পরেও নিজের দেশকে ভোলেনি, আবার বাংলাদেশকে আপন করে নিয়েছে, এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমি বিশ্বাস করি হামজা বাংলাদেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সারাবাংলা- হামজা ও বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কতটুক?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে আমার প্রত্যাশার জায়গাটা অনেক বড়। এজন্যই আসলে দেশের ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। দেশের জন্য ভালো কিছু করতেই বাফুফের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সারাবাংলা- ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফুটবল দলের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত থাকতে চান?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- জার্সি তৈরির মাধ্যমে এরই মধ্যে তো যুক্ত হয়েই গিয়েছি। এই মুহূর্তে বাফুফের মার্কেটিং দলের ৭ জন সদস্যের আমি একজন। সামনে আরও নতুন নতুন কাজের পরিকল্পনা আছে। সেটা সময় এলেই সবাই দেখতে পাবে। আমার কাজই কথা বলবে। আমি তৃণমূলকে ধারণ করে বাংলাদেশেকে গ্লোবাল জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। নিজের কাজের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই।
সারাবাংলা- নতুন প্রজন্মের ডিজাইনারদের জন্য কী পরামর্শ দিতে চান?
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- পরের প্রজন্মের জন্য রাস্তাটা সহজ করে দিতে চাই। আমরা যে বাধাগুলো পেয়েছি তারা যেন সেটা না পায়। তাদের জন্য প্যারামিটাররা অনেক উঁচু রাখতে চাই। ভবিষ্যৎ ডিজাইনারদের সবসময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কোথায় কী হচ্ছে সেটার ব্যাপারে জানতে হবে। অন্যদের কাছে ভিন্ন কী এমন জিনিস আছে সেটাকে খুঁজে বের করে নিজেদের কাজে লাগাতে হবে। বিশ্বমানের জার্সি তৈরি করতে বিশ্বমানের চিন্তা করতে হবে। আমরা সবাই দেশের ভালো চাই, ভালোকিছু করাই আমাদের লক্ষ্য।
সারাবাংলা- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
তাসমিত আফিয়াত আর্নি- আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। সারাবাংলাকেও অনেক ধন্যবাদ।
