Monday 21 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ ৫ দফা দাবি বৈকঐফো’র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৬ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫০

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাবেক সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ অনান্যরা।

ঢাকা: নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ (বৈকঐফো)।

শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি সাবেক সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনকে গতিশীল করা ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সিভিল প্রশাসনে কর্মরত ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।”

‘‘আমরা বিনয়ের সাথে বলতে চাই, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, প্রশাসন থেকে আওয়ামী আস্থাভাজন, দলদাস ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদেরদের অপসারণ করতে না পারলে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তোলা যাবে না, অন্যদিকে পেশাদারিত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তিক আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে না”— বলেন এবিএম আবদুস সাত্তার।

পাঁচ দফার অন্য দাবি হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষ্যমের শিকার বর্তমান সকল কর্মকর্তা-নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা ও দফতরে গুতুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, বৈষ্যমের শিকার এখনো বঞ্চিতদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা প্রদান এবং ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পদোন্নতি/পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

বিজ্ঞাপন

দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বৈষ্যম বিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের এই দাবি অবিলম্বে পুরণ না করা হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।”

একইসঙ্গে এখন থেকে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সিভিল প্রশাসনে সংঘটিত সকল অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জড়িত ব্যক্তি/কর্মকর্তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হবে বলে জানান এবিএম আবদুস সাত্তার।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট আমলেও মতোই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের ধারা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ফ্যাসিস্ট সরকারের দেওয়া চুক্তিভিত্তিক বাতিল করা হবে এই মর্মে ঘোষণা দিয়েও কোনো কোনো কর্মকর্তার চুক্তি অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি বাতিল করে আবার নতুন করে একই ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। কোনো কোনো পদে পূর্ব পরিচয়, বিশেষ যোগসূত্র বা অজ্ঞাত কারণে কোনো প্রক্রিয়ায় অনুসরণ ব্যতিরেখে ভিনদেশী নাগরিককেও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আবার কোনো কোনো পদে ফ্যাসিস্ট সহযোগী, বিতর্কিত ও ১/১১ এর দোসর কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘‘এসব কর্মকর্তা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির করার কাজে সচেষ্ট আছে। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্রে বিশেষ উপদেষ্টাগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য প্রশাসন ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বিলম্বিত করা ও অনৈতিক ফয়দা লাভ করা। কাজেই অবিলম্বে সকল চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।”

বিজ্ঞাপন

তিনি অভিযোগ করে বলেনম, ‘‘সাতক্ষীরা জেলায় গণহত্যা পরিচালনাকারী মূল হোতা বর্তমান পানি সম্পদ সচিব নাজমুল হাসান, শেখ মুজিব জন্মবার্ষিকী পালনে শত শত কোটি টাকা লোপাটের নায়ক বর্তমান কৃষি সচিব এমদাদুল্লাহ মিয়া, মুজিবপ্রেমী কর্মকর্তা বর্তমানে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগে মাঠ ও সমন্বয় বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন ও অন্যান্য ফ্যাসিস্ট দোসর সচিবরা এখনে কেন বা কাদের প্রশ্রয়ে চাকরিতে আছে? অবিলম্বে এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অপসারণ করতে হবে।”

আবদুস সাত্তার বরেন, ‘‘কিছু কিছু উপদেষ্টা এখনো ফ্যাসিস্ট দোসর কর্মকর্তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। ওনার ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী/সচিবদের একান্ত সচিবদেরকে তাদের একান্ত সচিব হিসেবে বহাল রেখেছেন তোফাজ্জল হোসেন, মফিদুর রহমানের মতো ফ্যাসিস্ট সহযোগী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কোন যোগ্যতায় সচিব হিসেবে পদোন্নতি/পদায়ন পায় তা আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই। আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের এসব কার্য্কলাপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানীর নামান্তর।”

তিনি বলেন, ‘‘পলাতক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ আমলাদের এখনো কীভাবে এবং কার স্বার্থে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতি ও পদায়ন করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো রকম ন্যায়নীতির তোয়াক্কা করেনি। দক্ষতা, যোগ্যতা দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। ধার ধারেনি প্রশাসনিক নিয়ম কানুনের। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্বেও অনেক সিনিয়ন কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। ফলে পেশাদার ও যোগ্য আমলাদের অনেকে হতাশা-অপমানে মারা গেছেন। মিথ্যা অভিযোগে কারও কারও নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, তাদের জেলে যেতে হয়েছে।”

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘‘কারণ ছাড়া অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা হয়েছে। কেউ কেউ ক্ষোভে অপমানে দেশত্যাগ করে বিদেশে অভাবনীয় কষ্ট করে জীবন অতিবাহিত করেছেন। আর এরমধ্যে যারা সার্ভিসে ছিলেন তাদের পদোন্নতি তো দূরের কথা পদায়ন হয়েছিল পাহাড়, জঙ্গল, দ্বীপে ও পৌরসভার মতো তৃতীয় স্তরের জায়গায় এবং কনিষ্ঠদের অধীনে চাকুরি করতে বাধ্য করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু কর্মকর্তাকে সচিবালয়ে প্রবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নেতা সাবেক সচিব বিজন কান্তি সরকার, সাবেক সচিব আবদুল খালেক, সাবেক সচিব আবদুল বারী ও সাবেক সচিব কাজী মেরাজ হোসেন প্রমূখ।

সারাবাংলা/এজেড/ইআ

বিজ্ঞাপন

এনসিপির ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠন
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০৭

আরো

সম্পর্কিত খবর