আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশিরভাগই ঢাকায় ‘আত্মগোপনে’
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:১৩ | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৪
ঢাকা: ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই ঢাকায় আত্মগোপন করে আছেন বলে জানা গেছে। মাঝে-মধ্যে এরা ঝটিকা মিছিল বের করছেন ও গোপন মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি, আবার কেউ অনলাইনে মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছেন। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। এছাড়া, মিটিংগুলোতে আলোচনার বেশ কিছু স্ক্রিনশটসও সারাবাংলার হাতে রয়েছে।
গতবছর গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেন। এর পর সুযোগ বুঝে বেশিরভাগই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে কেউ ভারতে, কেউ বেলজিয়ামে, কেউ ফ্রান্সে, কেউ জার্মানিতে, কেউ কানাডায়, কেউ আমেরিকা, কেউ দুবাই, কেউ তুরস্কে, আবার কেউ মালয়শিয়াতে পালিয়ে যায়। তবে সবচেয়ে বেশি গেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে অবস্থান করছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
তবে এমন অনেক নেতাকর্মী আছেন যাদের নিয়ে ধারণা করা হচ্ছিল যে, তারা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু ঢাকায় আওয়ামী লীগের হঠাৎ মিছিলের পর তাদের অনেকের চেহারাই দেখা গেছে। তারা আসলে ঢাকাতেই আত্মগোপনে ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেমন- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শাহে আলম মুরাদ হঠাৎ রাজধানীতে গত ৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ঝটিকা মিছিল বের করেন। ওই ঝটিকা মিছিলের পর ১৭ এপ্রিল ডিবি পুলিশ তাকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে।
আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, যারা ভারতে পালাতে পারেননি তারা ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। জেলা পর্যায়ের চেয়ে ঢাকা শহর অনেক বেশি নিরাপদ মনে করছেন তারা। ঢাকায় জনসংখ্যা বেশি, কারও খবর কেউ নেয় না। সারাদিন বাসায় থাকলেও কেউ খোঁজ করবে না। মোবাইল ফোনের পুরাতন সিম কার্ড পালটে নতুন সিম কার্ড নিয়ে তারা ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।
লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. মোতাহার হোসেন ৫ আগস্টের পর থেকেই ঢাকায় রয়েছেন। তার বড় ছেলে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লালমনিরহাট-১ আসনের অঘোষিত বরপুত্র মাহমুদুল হাসান সোহাগও ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। অথচ এলাকার মানুষ জানে, তিনি ভারতে রয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় তিনি একটি গাড়িও বিক্রি করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান সোহাগ হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম (লালমনিরহাট-১) এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য চালাতেন। তার কথায় সবকিছু হতো। সবকিছু একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি তার কারণে আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। অসংখ্য মানুষকে তিনি মামলা দিয়ে হয়রানি এবং হামলা করে নির্যাতন চালাতেন।’
লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান গণঅভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পর রংপুর মহানগরের একটি বাসা থেকে গ্রেফতার হন। তবে তার পুত্র রাবিক হাসান লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। রাকিব কালীগঞ্জ-আদিতমারী (লালমনিরহাট-২) উপজেলায় অঘোষিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার কথায় সরকারি-বেসরকারি সব অফিসের টেন্ডার চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন।
একইভাবে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনেও নেতাকর্মীদের ঢাকায় থাকার তথ্য মিলেছে। অনেকে অনলাইনে সরব রয়েছেন। আবার অনেক কলকাতায় আছেন বলে ধারণা করা হলেও প্রতিবেদনে ঢাকায় থাকার তথ্য মিলেছে। পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখলেও তারা ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যেম বেশি সরব থাকায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেনে। এরই মধ্যে অনেক এমপি-মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঢাকায় আত্মগোপনে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার রবিউল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে আত্মগোপনে আছেন। ডিবিও প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। কৌশল অবলম্বন করলেও প্রতিদিন কেউ না কেউ জালে ধরা পড়ছে। নগরবাসীর কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) তালেবুর রহমান বলেন, ‘৫০টি থানা এলাকায় পুলিশ, ডিবি ও অন্যান্য ইউনিট অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি র্যাব ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। মামলার আসামি যারা ঢাকায় লুকিয়ে রয়েছে তাদের দেখামাত্র গ্রেফতার করা হবে।’ এক্ষেত্রে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/পিটিএম