Sunday 20 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আলোর মুখ দেখছে ‘বে-টার্মিনাল’, একনেকে উঠছে রোববার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩০

বে-টার্মিনাল প্রকল্প, চট্টগ্রাম। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প বন্দর হিসেবে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল। নির্মাণ শেষে ২০২৬ সালেই এই টার্মিনালের অপারেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে ‘রহস্যজনক’ ধীরগতির কারণে নির্মাণকাজ শুরু দূরের কথা, প্রাথমিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়নি। ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প’ লিখে সাইনবোর্ড ঝোলানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রকল্পের কার্যক্রম।

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতির জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের দিকে সুনজর দেয়। নানা জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২০ এপ্রিল) বহুল আলোচিত বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপন হবে বলে চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) আমরা পাঠিয়েছিলাম। আরও কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। সেগুলো আমরা পাঠিয়েছি। একনেক পূববর্তী (প্রি-একনেক) অনুমোদন হয়ে গেছে। রোববার একনেকের সভা হবে। সেখানে বে-টার্মিনাল প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য তালিকায় রাখা হয়েছে। একনেক অনুমোদন দিলে এরপর প্রকল্পের জন্য ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের একটি লোন এগ্রিমেন্ট হবে। তখন আমরা পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারব।’

সূত্রমতে, প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুসারে এর মোট ব্যয় প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯০৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে বিশ্বব্যাংক, আর বাকি টাকার জোগান দেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একনেকে অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়ে অর্থায়ন জটিলতা কাটলেই শুরু হবে বে-টার্মিনালের ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ঢেউ নিরোধক বাঁধ বা ব্রেকওয়াটার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেলের জন্য ১ হাজার ৯৭৯ কোটি এবং রেল, সড়ক সংযোগসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামোতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া, নেভিগেশনে সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপনে সম্ভাব্য খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমার শেষ প্রান্তে সিইপিজেডের পেছনে সাগরপাড় থেকে সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অদূরে রাসমনিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ৯০০ একর ভূমিতে এই টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয় ২০১৩ সালে। ২০১৬ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে বন্দর। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর গত সাতবছর ধরে ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতা এবং রহস্যজনক ধীরগতির কারণে প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি। অথচ ২০২৬ সালে নির্মাণ শেষ করে অপারেশনে যাবার কথা ছিল বে-টার্মিনালের।

অভিযোগ আছে, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ী নেতাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট টানাহেঁচড়ায় প্রকল্পটি সেই আমলে আলোর মুখ দেখেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। যার ফলশ্রুতিতে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে।

সূত্রমতে, বে টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য ৬৬ দশমিক ৮৫ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরপর ২০২৪ সালের ২ মে প্রায় ৫০১ একর খাস জমি তিন কোটি টাকায় বরাদ্দ দেয় সরকার। বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

মাস্টারপ্ল্যানে ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কনটেইনার টার্মিনাল এবং দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার। এতে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বে-টার্মিনালে যে টার্মিনাল তিনটি নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল, একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল এবং একটি দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল।

মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি। বাকি দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫০ কোটি ডলার করে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফটের ৬ হাজার কনটেইনার বহন ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নোঙ্গর করা সম্ভব হবে। বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামোতে জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে। এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ ভিড়তে পারবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বছরে ৫০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আছে। কিন্তু হ্যান্ডল করছে ৩০ থেকে ৩২ লাখ কনটেইনার। বে-টার্মিনাল হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও তিনগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আলোর মুখ চট্টগ্রাম প্রকল্প বে -টার্মিনাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর