‘পারভেজ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছাত্রদল রাজনৈতিক অপপ্রচার করছে’
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০২:১৭
ঢাকা: প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে ছাত্রদল একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বৈছাআ’র মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হত্যার প্রকৃত কারণ, প্রকৃত অপরাধী ও ক্যাম্পাসে সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে থাকা বাস্তব চিত্রকে আড়াল করে তারা ঘটনার রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদে মনোযোগী হয়েছে। এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে এই হত্যার মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে। আমরা এই রাজনৈতিক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, হামলার প্রথম সিসি টিভি ফুটেজে যাদের সরাসরি আক্রমণ করতে দেখা যায় তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনাস্থলে প্রদর্শিত দ্বিতীয় ফুটেজে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির সঙ্গে যুক্ত ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের ছাত্র হৃদয় মিয়াজি ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সোবহান নিয়াজ তুষার ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, “একই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রদল কর্মী তাওহিদ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইমতিয়াজ জাহিদ এবং আরও কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীও। তবে তদন্তের আগে আমরা কোনোভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই না যে, কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই ছাত্রদল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে ‘মিডিয়া ট্রায়ালে’ লিপ্ত হয়েছে। যা নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত।”
বৈছাআ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আবারও জানাতে চাই- এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যে-ই হোক, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যেহেতু ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থী হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপস্থিত তারা যে সংগঠনেরই হোক তদন্তের আওতায় আনা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।’
উমামা বলেন, “আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই ঘটনা কেন্দ্র করে ছাত্রদল একটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ন্যায্য দাবি ও গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এই অপবাদ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগ্রামকে সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে যারা দমন করতে চায়, তারাই প্রকৃত অর্থে সহিংসতার পৃষ্ঠপোষক।”
তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো নিরীহ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার না হয়। তদন্ত হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং প্রমাণভিত্তিক-যেখানে কোনোরকম রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাব খাটানো যাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে আমরা একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই- গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়? কেন এমন ঘটনা বারবার ঘটছে, এবং কারা শিক্ষাঙ্গানকে সহিংসতার আস্তানায় পরিণত করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর ইন্টেরিম সরকারকে দিতে হবে। আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার সংগ্রামে আগে যেমন ছিলাম, আগামীতেও থাকব।’
এ সময় হত্যাকারীদের বিচার এবং দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সব গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম