তিনি বলেন, “আজ আমরা এমন একটি দিন উদযাপন করছি, যা মানবিকতা, সহানুভূতি, বৈচিত্র্য ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির প্রতীক ১৮তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২৫। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- “স্নায়ু বৈচিত্র্যকে বরণ করি, টেকসই সমাজ গড়ি”। এই প্রতিপাদ্য শুধুমাত্র অটিজম বিষয়ক সচেতনতার সীমারেখায় নয় বরং আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- একটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের পথে আমাদের সকলের দায়িত্ব ও অঙ্গীকার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু, কিশোর, যুব এবং প্রাপ্তবয়স্করা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের প্রতিভা, সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন সঠিক সহায়তা, উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, এবং সম্মানজনক পরিবেশ। আমাদের দায়িত্ব এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কেউ পেছনে পড়ে থাকবে না, কেউই অবহেলিত হবে না। তাদের প্রতিভা সৃজনশীলতা ও সক্ষমতাকে বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সুযোগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রয়াসেই গড়ে উঠতে পারে এমন এক পরিবেশ , যেখানে প্রতিটি মানুষ সমান মর্যাদা ও ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে পারবে এবং তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী সমাজে অবদান রাখতে পারবে। সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু মন্ত্রণালয় হবে স্পষ্টত সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান । আমাদের সেবা প্রতিটি গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যাবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, অটিজম ব্যক্তি কোনো সমাজের বোঝা নয়, তারা মানুষের জীবনের ভিন্ন বাস্তবতা। তাদের প্রতীভা, সৃজনশীলতা ও সক্ষমতা বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন সঠিক সহায়তা, উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্যতম মূলনীতি হলো ‘কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না’- এ মূলনীতিকে ধারণ করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সম্বলিত উদ্যোগ অপরিহার্য।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা গড়ে তোলা। আমরা স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশ একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হবে। কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার কারিগর হিসেবে সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে আমরা আমাদের সেবা পৌঁছে দিবো।
তিনি বলেন, এ সরকার এমন একটি সমাজ তৈরি করতে চায় যেখানে বৈচিত্র্য কে দুর্বলতা হিসেবে নয় বরং শক্তি ও সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা। আমাদের মনে রাখতে হবে সুযোগ ও যত্ন পেলে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিরাও পারবে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে, পরিবারকে সমৃদ্ধ করতে এবং জাতির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে।
তিনি জানান, অটিজম শিশুদের জন্য বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে, ১৪ টি অটিজম ও এনডিডি সেবাদান কেন্দ্র স্থাপন; পিতামাতা-অভিভাবক ও শিক্ষকগনকে শিশুদের যত্ন ও পরিচর্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে স্কিল ট্রেনিং কার্যক্রম(কেয়ারগিভার) প্রশিক্ষণ প্রদান; আর্থিক চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে অনুদান প্রদান; ১০৩ টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্র স্থাপন; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ও উপবৃত্তি প্রদান; প্রতিবন্ধী ক্রিড়াবিদদের জন্য শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠ তৈরি; বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম; ৮টি বিভাগে আবাসন, শিক্ষা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অটিজম মানবসম্পদকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে দক্ষ সম্পদে পরিণত করা। এই জন্য পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সফল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পারদর্শিতায় অবদান রাখায় অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্নদের মধ্যে পুরস্কার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।