রাবি: হলে সিট বণ্টনে অসঙ্গতি, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ এবং হলে খাবারের মান বৃদ্ধি ও শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ‘শিক্ষা ও শিক্ষার্থী অধিকার আন্দোলন’র ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী হলে আসন বণ্টন, শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত, হলে খাবারের মান বৃদ্ধি, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল, শিক্ষা, এবং হল সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি জানান।
এ সময় শিক্ষা ও শিক্ষার্থী অধিকার আন্দোলনের সংগঠক এবং রাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি পরিমান অথর্ব যে তারা এখন পর্যন্ত হলগুলোতে সুষ্ঠুভাবে আসন বণ্টন করতে পারে নাই। মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা হল পায় না অথচ দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থীরা হল পেয়ে যাচ্ছে। আমরা বলে দিতে চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী হলের আবাসিক কার্যকর করতে হবে। প্রাধ্যক্ষরা পরিষদ গঠন করে এক প্রাধ্যক্ষ ভুল করলে তার পেছনে সবাই দাঁড়িয়ে যায়। এই প্রাধ্যক্ষ পরিষদ বিলুপ্ত করতে হবে। আমরা জানি চাইলেই এখন শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, কিন্তু আপনারা পদক্ষেপ নিন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ আবাসিকতা নিশ্চিত করবেন। যেনো একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর তার ভর্তি স্লিপের মধ্যে হল কক্ষ উল্লেখ থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকগুলো সংস্কার কমিটি গঠন করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি আমি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে এখানেও সংস্কার কমিটি গঠন করা দরকার। আপনারা তদন্ত কমিটি থেকে বের হয়ে সংস্কার কমিটি গঠন করুন। মেডিকেল সংস্কার কমিশন, শিক্ষা সংস্কার কমিশন এবং হল সংস্কার কমিশন গঠন করুন। এগুলো গঠন করে আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করুন।’
শিক্ষা ও শিক্ষার্থী অধিকার আন্দোলনের আরেক সংগঠক আল শাহরিয়ার শুভ বলেন, ‘এই প্রশাসন জোড়াতালি দিয়ে চলছে। প্রশাসন যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে সবগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। তারা হলে আসন বণ্টনে ভালো ফলাফলধারীকে প্রাধান্য দিচ্ছে। যার ফলে অনেক সিনিয়র হলে উঠতে পারছে না, অথচ অনেক জুনিয়রও আসন পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নাপা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। একটু অসুস্থ হলে শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেলে যেতে হয়। এ ছাড়া ২৬ মার্চের খাবার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈষম্য তৈরি করেছে। তারা শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে। খাবার বণ্টনের প্রক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, বিনোদপুরের শিক্ষার্থী। এই বৈষম্য চলতে দেওয়া যায় না। আমরা চাই প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’
উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের তুলনায় হলের আসন সংখ্যা অনেক কম, তাই অনেকেই মেসে থাকে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় দিবসে খাবারের ব্যবস্থা করেছে, এটা একটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত। চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি সামান্য খাবারের জন্য রাস্তায় নামতে হয় তাহলে সেটা লজ্জাজনক। যারা দেশ জাতিকে নিয়ে গবেষণা করবে, দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে তাদেরকে আজকে মানববন্ধন করতে হচ্ছে। সুতরাং আমরা প্রশাসনের ওপর আশা রাখছি তারা হলগুলোতে খাবারের মান নিশ্চিত করবে এবং হলে শতভাগ আসন নিশ্চিতের পদক্ষেপ নিবে।’
কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আজাদ। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।