‘ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম’
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫১ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৩
ঢাকা: নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ এর মহাসচিব এবং সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৮ সালে নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
শওকত মাহমুদ বলেন, ‘২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচনের পটভূমি একইরকম। ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন এতোটাই ছিল যে আমরা অনেকেই নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি মনে করি যে, আরও যারা এই নির্বাচনে গিয়েছিলেন, তাদের সবারই ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে বলতে পারি, গোয়েন্দা সংস্থা আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ৭০টি মামলা দিয়ে এর রায় ঘোষণা করা হবে বলে ভয় দেখিয়েছে। আপনারা দেখেছেন যে, ছাত্রদের আন্দোলন যখন তীব্র হয় সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে ছাত্ররা তাদের কর্মসূচি এবং আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছিল। অর্থাৎ ব্যক্তিকে বাঁচাতে এই পথ আমাদের অবলম্বন করতে হয়েছিল। ২০১৮ সালে একটি দল নির্বাচনে গিয়েছিল বাধ্য হয়ে নিজেদেরকে বাঁচাতে। এই নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করি।’
বিএনপি থেকে দূরে সরে আসার কারণ কি? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই বিএনপি থেকে আমার সরে আসা। আমরা বলেছিলাম যে ইনসাফ কায়েম কমিটি একটি গণঅভ্যুত্থান করতে চায়। যে গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। আমাদের এই আহ্বানকে বিএনপি’র কোনো কোনো নেতা ভুল বুঝেছেন। মনে করেছেন যে, তারা দলকে বোধ হয় ভাঙতে চান। সে কারণে আমার সঙ্গে বিএনপি’র একটা বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষ যে গণঅভ্যুত্থান চেয়েছিল কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো যে গণঅভ্যুত্থান চেয়েছিলসেটি অরাজনৈতিক ছাত্র জনতার নেতৃত্বেই সফল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বিএনপির কাউকে দোষ দেওয়ার নেই। আমি আশা করবো গণঅভ্যুত্থানের পরে যেহেতু একটা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমি একটি নতুন দল করেছি, কারণ আমাদের ভেতরে কতগুলো উপলব্ধি আছে। আমরা নতুন দল করেছি। এটা গত দুই তিন বছর ধরে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে, মানুষের মতামত নিয়ে আমরা এই দলটি গঠন করেছি এবং এই দলটি নিয়ে, আমার ব্যাপারে বিএনপি যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই।’
দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করব এবং সে সময় আমাদের গঠনতন্ত্র, আমাদের লোগো, প্রতিক, পতাকা, সবগুলোই আমরা সেখানে জমা দিব। সেজন্য আমরা কিছুটা সময় চাচ্ছি। যেহেতু নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের আবেদন সময়সীমা আরও দুই মাস বাড়িয়েছে। আমরা এই সময়সীমার মধ্যে জমা দিব। অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা আছে সবকিছু করার।’
কোনো রাজনৈতিক সুবিধার জন্য দল গঠন হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন সামনে যে ঐক্যের আহ্বান আছে। অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থান গণহত্যা ঘটিয়েছে যে ফ্যাসিস্ট ও দোসররা, তাদের বাদ দিয়ে নতুন জাতীয় ঐক্য গড়তে আমাদের সবাইকে লাগবে। সেই ঐক্য গঠনে আমরা কাজ করে যাবো।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘আদর্শ ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে যদি কোন জোট হয় সেই জোটে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা নিজেদের দলও গোছাবো এবং নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। এই মুহূর্তে, কোন দলে যাব এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেওয়া হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। দলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হয়েছেন গোলাম সারোয়ার মিলন। ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে রয়েছেন রফিকুল হক হাফিজ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান, রেহানা সালাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এম এ ইউসুফ, সৈয়দা আজিজুন নাহার, গোলাম মেহরাজ, ব্রিগ্রেডিয়া জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম, নির্মল চক্রবর্তী।
সারাবাংলা/এফএন/এসডব্লিউ