পরিচয় গোপন করে সেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সাধু সাজার চেষ্টা
২৫ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৩৮ | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ২২:১০
ঢাকা: তাপস পাল আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও এখন আর ওকালতি করেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাধারণ মানুষের আতঙ্ক। এমনকি ওই সময় নিজ ধর্মের লোকজনও তার কাছে নিরাপদ ছিল না।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, রায়েরবাজার এলাকায় মন্দিরের জমি দখল করে তিনি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সম্পত্তি ও সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
তাপস পালের বিরুদ্ধে পল্টন দাস নামে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের একজন সেবায়েত সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় তাপস একজন আসামি। তাপস পালের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পল্টন দাস একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
তাপস পালের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, শুধু ঢাকাই নয় বরং তার নিজ জেলা বাগেরহাট এলাকায় নিজের গ্রামের মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। তার ক্ষমতার দাপটে আতঙ্কিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। তার ভয়ে ঢাকা ও বাগেরহাটের সনাতন ধর্মের লোকজনও তটস্ত থাকতেন। গ্রামের মানুষের জন্যও তিনি ভয়ের উৎস। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইতেন না। তিনি যা বলতেন মুখ বুঝে অন্যায় হলেও সহ্য করতে হতো।
এ কারণে ৫ আগস্টের পর এ.কে সাহা নয়ন নামের এক যুবক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘তাপস পালের অপকর্মের বিরোধিতা করায় আমাকে আয়নাঘরে পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল। বহুরূপি তাপস পালের ক্ষমতার উৎস থেকে বাঁচতে চায় নিরীহ অভিযোগকারীরা।’
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এরপর তার পুরো স্বৈরাচার বাহিনী পালিয়ে যান। আর কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে অত্যাচারী তাপস পালও গা ঢাকা দেন।
কিছু দিন পর তাপস পাল ফেসবুকসহ সকল জায়গায় রাজনৈতিক পরিচয় মুছে দেন। এরপর তিনি শুধু ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরিচয় দিচ্ছেন। আড়ালে থেকে আওয়ামী লীগের থিংকট্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তাপস পালের বিরুদ্ধে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত পল্টন দাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাপস পাল আমার ওপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছেন। মন্দিুরের জায়গা ভাড়া দিযে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। মন্দির থেকে আমাকে বের করে দিয়েছিলেন। তিনি দেশের নানারকম তথ্য বাইরে পাচার করেন বলেও শোনা যায়। ৫ আগস্টের পর তিনি সাধু হয়ে গেছেন। তিনি ওপরে দেখাতে চাচ্ছেন যে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। অথচ তিনি আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। এখন তিনি বলছেন, বর্তমানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কাজে যুক্ত নই। সীমিতভাবে কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে নিজেকে ভালো বানানোর অভিনয় করছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তাকে কেন পুলিশ গ্রেফতার করছে না তা বুঝতে পারছি না।’
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আরেকজন সেবায়েত নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাপস পাল আন্দোলন চলাকালে সেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে লোকজন নিয়ে বিক্ষোভ বের করতেন। লাঠিসোটা মিছিল নিয়ে গুলিস্তানে কেন্দ্রীয় অফিসে যেতেন। সচিবালয়ের সামনে ছাত্র আন্দোলন দমাতে সেই মিছিল থেকে ধাওয়া দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যখন তুমুল আন্দোলন শুরু হয় সেদিন তাপস পাল একটি বিক্ষোভ নিয়ে লালবাগ থেকে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল।’
তার এলাকার হিন্দু ধর্মের অনেক অনুসারী বলেন, ‘তাপস যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র জনতার বিপক্ষে অবস্থান করেছিল সেহেতু কোনোভাবেই তিনি পার পেতে পারেন না। তিনি এখন চেষ্টা করছেন বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে কিভাবে মিলেমিশে থেকে মামলার হাত থেকে রেহাই মেলে। এ জন্য তিনি নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় তার দায়ও কম নয় বলেও জানান একাধিক ব্যক্তি।
এসব বিষয়ে জানতে সেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাপস পালের দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই
আওয়ামী লীগ ঢাকেশ্বরী মন্দির তাপস পাল সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিন্দু ধর্ম