ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচি শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) জানান, এই সংকটময় সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে তেহরান তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করছে।
এই সময়ে সৌদি আরবও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) আরাঘচি লেখেন, ‘এই কঠিন সময়ে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক ব্যবহার করে আমরা বোঝাপড়া গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত।’ তিনি ১৩০০ শতকের পারস্য কবি সাদির একটি কবিতা উল্লেখ করে বলেন, ‘মানুষ এক সত্তা ও আত্মার সৃষ্টি; একজনের যন্ত্রণা অন্যদের অস্বস্তিতে ফেলবে।’
ভারত ও পাকিস্তানকে ইরানের ভাইসুলভ প্রতিবেশি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেমন আমাদের অন্যান্য প্রতিবেশি গুরুত্বপূর্ণ, এরা তেমনি আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায়।’
ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আরাঘচির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দারকে ফোন করেন এবং পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিং নেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, দার ইরানের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে তেহরানের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের ফোনালাপের বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর নিজেই সামাজিক মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। পেহেলগামের হামলা ও তার সীমান্ত পেরিয়ে যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দার সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সম্ভাব্য উত্তেজনাকর পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং যে কোনও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দৃঢ় জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দার ও ফয়সাল আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত পরামর্শ ও সমন্বয় বজায় রাখার ব্যাপারে সম্মত হন।
উল্লেখ্য, ইরান ও সৌদি আরব ২০২৩ সালের মার্চে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে আঞ্চলিক ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এর আগেও সৌদি আরব ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। তখন সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয় দেশ নীরবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিয়েছিল, যা পরে আমিরাতের কূটনীতিকরা স্বীকারও করেন।