Saturday 14 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রবাসীদের ভোট
সহযোগিতা চাইলেন সিইসি, আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানাবে দলগুলো

‎স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৬ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:১৩

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অংশীজনের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘ভোটিং সিস্টেম উন্নয়ন’ সংক্রান্ত সেমিনার। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়ে দলগুলো একমত পোষণ করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে কোন পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হবে সে বিষয়ে দলগুলো তাদের মতামত জানায়নি।  দলীয় ফোরামে আলোচনার পর নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে দলগুলো।

‎মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অংশীজনের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘ভোটিং সিস্টেম উন্নয়ন’ সংক্রান্ত সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন এসব কথা জানান। সেমিনারে আগামী ১৫ মের মধ্যে দলগুলোকে মতামত দিতে অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

‎সেমিনারে প্রবাসীদের ভোটদানের তিনটি পদ্ধতির ইতিবাচক ও চ্যালেঞ্জ উপস্থাপনা করা হয়। পোস্টাল ও অনলাইন ভোটিংয়ের চেয়ে প্রক্সি পদ্ধতির ওপর ইসির ঝোঁক থাকলেও এ পদ্ধতিতে ঝুঁকির থাকার বিষয়ে মত দিয়েছে জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল। দলগুলোর প্রতিনিধিরা ‘প্রক্সি বাছাই, পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার অনিশ্চয়তা, কারিগরি নিরাপত্তা’র বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

‎সেমিনার শেষে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করার চেষ্টা করছি। আপনাদের মতামতকে গুরুত্ব দিব। আমরা কনফিডেন্ট, আমরা শুরুটা করতে চাই। আপনাদের সহযোগিতা, বিশেষ করে দলগুলোর সমর্থন চাই।’

‎তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হচ্ছে আমাদের প্রধান স্টেকহোল্ডার। ভবিষ্যতে আপনাদের দাওয়াত দেব; ইনশাআল্লাহ আপনারা আসবেন। আপনাদের মতামতের জন্য এবং সর্বোপরি নির্বাচনের জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

‎সেমিনারে বিএনপি প্রবাসীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যবস্থা করার পক্ষে মত দিয়েছে। সেমিনারে অংশ নেওয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে কেবল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিবেচনায় নিলে হবে না, এনআইডির পাশপাশি পাসপোর্টও বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা, অনেকের এনআইডি নেই।’

‎তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালে যখন ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন আমরা প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগের প্রস্তাব করেছিলাম। ২০১৭ সালের ভিশন’ ২০-৩০, ২০২২ সালের ২৭ দফাতেও প্রবাসীর ভোটের কথা বলেছি। ২০২৩ সালের ৩১ দফার রাষ্ট্র সংস্কারের সময়ও এই বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। প্রবাসীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগের প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন আছে।’’

‎তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দলে আলোচনা করে মতামত দেবো। কোনটা সবচেয়ে ভালো হয় সে মতামত দেব। এই দুনিয়ায় কোনো সিস্টেমই ফুল প্রুফ না। ফুল প্রুফ হলে সংস্কার, বিপ্লবের প্রয়োজন হয় না। আমরা বিবেচনা করবো সবচেয়ে যেটা সহজ, বোধগম্য হবে, সবচেয়ে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে, যেটা সবচেয়ে সাশ্রয়ী হবে সেই প্রক্রিয়ার প্রতি আমরা সম্মত হতে পারবো বলে আশাকরি।’

‎বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আমরা ইসির সঙ্গে বৈঠকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি এনেছিলাম। ইসি সেই উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে গত ১৫ বছরে। ইসির প্রতি ট্রাস্ট অ্যান্ড কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলেছে।’

‎প্রক্সি ভোটের ত্রুটির বিষয়ে তিনি জানান, এক্স একজনকে পছন্দ করে, ওয়াই আরেকজনকে পছন্দ করে। তাহলে এক্স এর প্রক্সি যদি ওয়াইকে দেওয়া হয়, তাহলে ভোটারের রায়ের সঠিক প্রতিফলন হবে না। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই পরবর্তীতে মতামত দেওয়া হবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। কোনো অবস্থাতেই সিস্টেমকে ডেসট্রয় করা যাবে না।

‎গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘প্রক্সি ভোটে দেখেছি যেটা, আমার মা একটি দলকে ভোট দেয়। আমার বাবা আরেকটি দলকে ভোট দেয়। এক্ষেত্রে প্রক্সির মাধ্যমে কী করে সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যায়, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’

‎‎জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ইসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা যেন অর্ধেক নয়, পরিপূর্ণ এফোর্ট দিয়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারে। প্রক্সি ভোট হলে কোথাও কোথাও বেশ ভোট আসতে পারে৷ সেক্ষেত্রে এটা একটা থ্রেট হতে পারে। আমরা দলীয় ফোরামের আলোচনা করে ইসিকে মতামত জানাবো।’

‎তিনি বলেন, ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রাস্ট। এটা বজায় রাখতে হবে। সবার যাতে ট্রাস্ট থাকে অনলাইন হোক, পোস্টাল হোক। প্রক্সি নিযে আমাদের সন্দেহ আছে। সেটা দলীয় ফোরামের আলোচনা করে জানাবো।’
‎‎
‎এবি পার্টির শ্যাডো অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি আব্বাস ইসলাম খান জানান, মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের এনআইডি আছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশে কিন্তু বেশির ভাগেরই পাসপোর্ট আছে৷ কাজেই পাসপোর্টও যেন অপশন রাখা হয়।

‎তিনি জানান, এনআইডি’র ডাটা নিরাপত্তা দিতে পারিনি। তাই অনলাইন ভোটিংয়ে পাবলিক ট্রাস্ট নিয়ে আসতে হবে। কেননা, শুরু করে সিকিউরিটি দিতে না পারলে বন্ধ হয়ে যাবে৷ অনলাইনে যেহেতু হ্যাক করা যায়, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার আসলে কী হবে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রক্সি ভোট বাংলাদেশের জন্য খুব রিক্সি। উন্নত বিশ্ব যেখানে পারছে না, আমাদের নাগরিকরা যেখানে সত্যিকার নাগরিক হতে পারিনি, সেখানে দলগুলো কিন্তু ফাঁকফোকর বের করে ফেলবে।

‎বাংলাদেশের কমিউন্সি পার্টি’র (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, প্রবাসে দেড় কোটি ভোটার, এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে আছে৷ সতর্কতার সাথে আরো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তাই ইসির উচিত দলগুলোকে আস্থায় এনে যেন কাজ করে।

‎নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার জানান, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি।

‎বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তার দল প্রক্সি ভোটের পক্ষে। অনলাইন ভোটিং নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর পোস্টাল ব্যালট নিয়ে আগ্রহ নেই।

‎বাংলাদেশ কংগ্রেস বিস্তারিত মতামত দেওয়ার কথা বললেও প্রক্সি ভোটের বিপক্ষে দলটি।

‎সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রধান আবু লায়েন্স মুন্না জানান, তার দল প্রক্সি ভোটিংয়ের পক্ষে নয়।

‎‎বাংলাদেশ জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান আলী সাজু জানান, তার দলও ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাবে।

‎বাংলাদেশ মুসলীম লীগের সভাপতি কাজী আবুল খায়ের জানান, প্রবাসীদের ভোটিং ব্যবস্থা নির্ধারণের পূর্বে দলগুলোর একমত হতে হবে যে ভুল হলেও মেনে নেবে।

‎দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব আকবর হোসেন পাঠান জানান, প্রবাসীদের ভোট নেন, তবে আগে দেশের ভেতরে ভোট সুষ্ঠু করেন।

‎যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, দেশ থেকে পালিয়ে গেছে তারা যেন কোনোভাবেই অনলাইনে ভোট দিতে না পারে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এলডিপি) প্রেসিডিয়াম মেম্বার লে. জেনারেল (অব.) ড. চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।

‎সেমিনারে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২১ দলের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংবাদ মাধ্যম, কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

‎সারাবাংলা/এনএল/এমপি

অনলাইন ভোটিং প্রবাসীদের ভোটাধিকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর