আরব আমিরাতে প্রধান বিচারপতি
পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন আইনি উদ্যোগ নিয়েছে বিচার বিভাগ
২৯ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৪৬
ঢাকা: পরিবেশ রক্ষার জন্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন স্থায়ী আইনগত উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানে পরিবেশ সুরক্ষায় দেশের অঙ্গীকারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বিশেষত বিপজ্জনক শিল্পগুলোর ক্ষেত্রে— যেমন, জাহাজ ভাঙা শিল্পে পরিবেশগত মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রায়ের কথা উল্লেখ করেন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড দ্য কন্সটিটিউশন: ফিফ্লেকশনস ফ্রম দ্য গ্লোবাল সাউথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবীসহ অন্যান্য পেশাজীবীর লোকজন অংশ নেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক পাবলস এলেফথেরিয়াডিস। এতে মূলত বাংলাদেশের মতো পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে সংবিধান, মানবাধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যকার সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করা হয়।
নিজের ভাষণে প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদ বলেন, জলবায়ু সংকট কেবল একটি পরিবেশগত জরুরি অবস্থা নয়। বরং এটি একটি ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট সংকটও বটে। ইতিহাস পর্যালোচনায় উন্নত দেশগুলো কার্বন নিঃসরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখলেও আজ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাবের মুখে পড়েছে তুলনামূলকভাবে কম কার্বন নিঃসরণকারী উন্নয়নশীল দেশগুলো।
এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত প্রথম পর্যায়ের প্রাথমিক পরিবেশ ন্যায়বিচার আন্দোলন থেকে শুরু করে কোচাবাম্বার সংক্রান্ত জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারাবাহিক বিকাশের ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া নিজের দেওয়া রায়সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় উল্লেখ করেন। কীভাবে পরিবেশগত অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের প্রবর্তিত নীতির তুলনা করেন প্রধান বিচারপতি।
বক্তব্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন দেশের সহায়তায় শক্তিশালী আর্থিক ও আইনি কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথাও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুতি, ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ বিষয়েও আলোচনা করেন তিনি। এছাড়া পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে একটি বৈশ্বিক নৈতিক মানদণ্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে বাস্তুচ্যুত জনগণের জীবন, আশ্রয় ও জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম এমন আইনগত কাঠামো প্রবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আইনজীবীদের প্রতি শক্তিশালী বার্তা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, জলবায়ু ন্যায়বিচার এখন আর কোনো বিলম্বিত আদর্শ নয়। বরং এটি একটি সংবিধানিক অঙ্গীকার। এজন্য আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে নতুন প্রজন্মের আইনজীবী ও বিচারকদের আহ্বান জানান তিনি।
সারাবাংলা/আরএম/এসআর
আরব আমিরাত সফর নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি আবুধাবি প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ