মুন্সীগঞ্জে মর্টারশেল বিস্ফোরণে অর্ধশত বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৬
মুন্সীগঞ্জ: জেলার গজারিয়া উপজেলার আড়ালিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা মর্টারশেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। নিষ্ক্রিয় করার সময় ওই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় আরফিন (৭) নামের এক শিশু পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়। বিস্ফোরণের সময় ওই গ্রামে নিজের নানা বাড়িতে অবস্থান করছিল শিশুটি। এছাড়া রেনু মিয়ার খামারের ১৫টি গরু বিস্ফোরণের পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওই গরুগুলো কোনো খাবার খাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মর্টার সেলের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে রয়েছে গ্রামবাসীর বাড়িঘর। ওই গ্রামের টিভি ফ্রিজসহ বৈদুৎতিক সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ভবনের দেওয়াল ফেটে রয়েছে। মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকার মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি কোন জনমানবহীন স্থানে ওই মর্টারশেলটি নিষ্ক্রিয় করা হলে তাদের এতো ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে উদ্ধার হওয়া মর্টারশেলটি ধ্বংস করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। খবর নিয়ে জানা যায়, মর্টারশেলটি নিষ্ক্রিয় করতে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে কাজ শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। রাত ৮টার দিকে মর্টারশেলটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। তবে বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিল যে এতে গ্রামটির শতাধিক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ফোরণে সেলিম, হারেস, রশিদ, রফিজ, লাকি বেগম, মইনউদ্দিন, সেলিম, আ. বারেক ব্যাপারী, ইয়াসিন, রেনু মিস্ত্রী, ফরিদ হোসেন, আব্দুল হান্নান, মানিক মিয়া, জলিল, মুক্তার হোসেন, আব্দুল গাফফার, সেলিম মিয়া, বারেকের বাড়িসহ গ্রামটির অর্ধশত বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওই গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে সেলিম বলেন, ‘আমার দুটি বসত ঘরের টিন সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এছাড়া ঘরের ইলেকট্রিক সামগ্রী সব নষ্ট হয়ে গেছে এতে আমার প্রায় আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
আ. বারেক ব্যাপারী বলেন, ‘আমি আমার বাড়িতে চার তলা ভবন নির্মাণের কাজ করছি। বিস্ফোরণে আমার বিল্ডিয়ের নিচ তলার দেওয়াল ফেটে গেছে।’
লাকি বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। কিছুদিন আগে আমি টিন ও কাঠ দিয়ে ঘর তুলছি। বিস্ফোরণে আমার ঘরের সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরে থাকা টিভি ফ্রিজসহ আমার সব শেষ হইয়া গেছে।’
মাফুল মিয়ার ছেলে জসিম বলেন, ‘আমার বিল্ডিংয়ের দেওয়াল ভেঙে আমার ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এছাড়া মাফুজ ফকির, ইয়াসিন, মইনউদ্দিন অভিযোগ করেন তাদের বাড়ির টিনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চা দোকানী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মর্টারশেলটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতোটা বেশি ছিল যে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে থেকেও আমার দোকানের প্রায় সব কিছু উড়ে যায়। শুধু আমার নয় আশপাশের অন্তত ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদ ও বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে। তীব্র শব্দে মারা গেছে গোয়ালে থাকা গরু বাছুর।’
ঘটনাস্থলের চার কিলোমিটার দূরে বালুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা তানিয়া আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যা ঠিক ৭টা ৫৬ মিনিটে আমরা তীব্র ঝাকুনি অনুভব করি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা ভূমিকম্প ভাবলেও পড়ে জানতে পারি আড়ালিয়া গ্রামের উদ্ধার হওয়া মর্টারশেলটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।’ এদিকে এই ঘটনার পর স্থানীয়দের রেষানলে পড়েন পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গণমাধ্যম কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয় কয়েকজন।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘মর্টারশেলটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করায় আশপাশের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।’
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্থদের সহয়তার ব্যপারে আজ বিকেলে ৩টার দিকে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে জরুরি সভা হবে। সভায় বসে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল গজারিয়া উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন হানিফের কৃষি জমিতে মাটি কেটে আইল বানাতে গিয়ে একটি মর্টারশেল উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এটিকে প্রথমে সীমানা পিলার মনে করলেও পরবর্তীতে পুলিশ জানায় এটি একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল। পরে ওটাকে নিষ্ক্রিয় করার সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হন ওই গ্রামের লোকজন।
সারাবাংলা/এসডব্লিউ