Thursday 01 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দাবি আদায়ে ড্রাগন সোয়েটারের কর্মীদের বিক্ষোভ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ মে ২০২৫ ১৫:১৫ | আপডেট: ১ মে ২০২৫ ১৭:২৭

ড্রাগন টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ করে পাওনা বঞ্চিত ড্রাগন সোয়েটারের কর্মীরা।

ঢাকা: মহান মে দিবসে শ্রমিকদের ন্যায্য বকেয়া পাওনা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে পাওনা বঞ্চিত ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকরা।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর মালিবাগে ড্রাগন টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ করে পাওনা বঞ্চিত ড্রাগন সোয়েটারের কর্মীরা। যেসব শ্রমিকদের নামে মামলা হয়েছিলো তারাও এতে অংশ নেন।

মিছিলটি মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে শুরু হয়ে মৌচাক মোড় ঘুরে ড্রাগন টাওয়ারের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে সেখানে সমাবেশ করে শ্রমিকরা। সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, দ্রুত সময়ে ন্যায্য পাওনা না দিলে ড্রাগন সোয়েটারের মালিক প্রয়াত মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের গুলশানের বাড়ি ঘেরাও করা হবে।

তথ্যমতে, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিকে পুঁজি করে রাজধানীর মালিবাগের ড্রাগন সোয়েটারের প্রায় ৫০০ শ্রমিককে চাকরিচুত্য করা হয়েছিল। লকডাউন শুরু হলে সে বছরের ২৬ মার্চ থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর এই শ্রমিকরা আর কারখানাটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। ওই সময় থেকেই শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সার্ভিস বেনিফিট ও প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ ন্যায্য পাওনার দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ, দেনদরবার— এমন কিছু নেই, যা তারা করেনি।

পাওনা বঞ্চিত শ্রমিকরা ওই সময় বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অনশন ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন। সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপিও দেয়। তৃপক্ষীয় বৈঠকও হয়। তবু শ্রমিকদের দাবি মানেননি কারখানাটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। ‘ওসি কুদ্দুস’ নামে পরিচিত এই ব্যবসায়ী তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি। পরে দীর্ঘদিন ধরে ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, সেসব শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে মালিকপক্ষ। ১৬ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে হাতিরঝিল থানায় মামলা করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জন শ্রমিককে আসামি করা হয়েছে ওই মামালাতে। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পরও ওই মামলা প্রত্যাহার হয়নি বলে জানান শ্রমিকরা।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ড্রাগন মালিক ওসি কুদ্দুস পতিত আওয়ামী আমলের স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে ও বিজিএমইএ’র একাংশকে ব্যবহার করে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা আদায় আন্দোলনকে বাঁধাগ্রস্ত করেন। ড্রাগন গ্রুপের শ্রমিক কর্মচারিদের বকেয়া বেতন কষ্টার্জিত পিএফ ও আইনানুগ পাওনা বঞ্চিত করে। আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা শ্রমিকদের নামে সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়, ৫ আগস্টে বিপ্লব পরবর্তী ছাত্রজনতার সরকারের আমলেও যা বহাল আছে। এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে নীরিহ ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। শ্রম আদালতে শ্রমিক কর্মচারিদের প্রায় শতাধিক পাওনা আদায়ের মামলা চলমান। অজ্ঞাত কারণে প্রায় ৫ বছর যাবত এই মামলাগুলো স্থবির হয়ে রয়েছে। মালিকপক্ষ কালো টাকা ব্যবহার করে আইনের নানা ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে মামলা কার্যক্রম স্থবির করে রেখেছে। সমাবেশে উপস্থিত শ্রমিকরা আইন উপদেষ্টা ও শ্রম উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের করোনা মহামারি শুরু হলে মালিক ওসি কুদ্দুস ওই কারখানা বেআইনী ভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন। অতিমারি করোনা উপেক্ষা করে প্রায় দুই বছর হাজারও শ্রমিক রাজপথে আন্দোলন করে। এই আন্দোলন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও আছড়ে পরে। মালিকপক্ষ শ্রম ভবনের মধ্যস্থতায় ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করেও পাওনা পরিশোধ করেনি। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা সরকারের কার্যকর সহযোগীতা কামনা করছে।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে ড্রাগন টাওয়ারের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পাওনা বঞ্চিত শ্রমিক মো. আল-আমীন, মো. নজরুল ইসলাম, শুক্কুর চৌধুরী, মো. বাবুল, শাহিন আলম, রেহেনা আক্তার, সর্বশেষে ড্রাগন সোয়েটারের মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী এবং বিশ বছর চাকুরি করে কষ্টার্জিত পিএফসহ আইনানুগ পাওনা বঞ্চিত শ্রমিক মো. আ. কুদ্দুছ।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, অনতিবিলম্ব পাওনা পরিশোধ করা না হলে মালিক ওসি কুদ্দুসের গুলশানের বাসা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শ্রমিকদের রক্ত ও ঘামের টাকা পরিশোধ না করে এই ভবনে অন্য প্রতিষ্ঠান ইমপেরিয়াল ইন্টারনাল স্কুল এবং সোনালী লাইফ ইনসুরেন্সের কার্যকম পরিচালনা করা নৈতিকতা বিরোধী। ওসি কুদ্দুসের পরিবারের সবার নামে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স এর শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এর মামলা তদন্ত চলমান । অতি দ্রুত ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার দাবি জানান বক্তারা।

আরও পড়ুন:

পাওনা আদায়ে আন্দোলন, ড্রাগন সোয়েটারের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা!

ড্রাগন সোয়েটারে ১০ মাসের বেতন পাওনা কর্মচারীদের

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি

দাবি আদায় বকেয়া পাওনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে